
বাংলাদেশে গত বছর ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনে কারখানায় অগ্নিকান্ডে প্রায় ১১২ জন গার্মেন্ট কর্মী নিহত হয়, আহত হয় অনেকে ।আহতরা এখনও মৃত্যুযন্ত্রণায় ভুগছে। বেচে থেকেও মৃত আজ তারা। কারণ আজ তারা পরিবারের হাতে দুমুটো ভাত তুলে দিতে পারছে না। শুধু হয়েছে পরিবারের বোঝা।
এরই মধ্যে কেটে গেছে একটি বছর। কিন্ত এসব পরিবার পায়নি যথাযথ ক্ষতিপূরণ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) চাইছে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা দিতে। কিন্তু বাংলাদেশি পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সাড়া দিচ্ছে না। রোববার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। নিউইয়কভিত্তিক সংগঠনটি তাজরীন ফ্যাশনসের নিহত শ্রমিকদের এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিদেশি ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আহত শ্রমিক ও মৃত পরিবারের অনেকই হিউম্যান রাইটস ওযাচের সাক্ষাতকারে জানিয়েছে,তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস এ আগুন লাগার এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও তারা কোন ক্ষতিপুরণ পায় নি ।
একজন বলেছেন, অর্থের জন্য তার স্বামী এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতছে। অন্যরা জানিয়েছেন, তারা তাদের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে পারছেন না, এখন তাদের কাজ করে খাওয়ার মতো সামর্থ্ নেই। পঙ্গু হয়ে তারা শরীরে ব্যাথা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
পোশাক ও গামেন্টস বিষয়কন এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এ্যাডামস জানান, তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ড এক বছর পেরিয়েছে কিন্তু এখনোও ভুক্তভোগীরো ক্ষতিপুরন পায়নি।।কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত বিদেশী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও এসব দরিদ্র শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেয় নি।এটা অনেক দু:খজনক ব্যাপার
অন্যদিকে মার্কিন ক্রেতা ওয়ালমার্ট, সিয়ারস, চিলড্রেনস প্লেসও এগিয়ে আসেনি। তারা ক্ষতিপূরণ দিতে অপারগতা জানিয়েছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচ এ ধরনের ১৬ টি প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য জন্য আবেদন জানায় । কিন্ত তারা কেউ সাড়া দেয় নি ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লাগার দুই মাস আগে সরবরাহকৃত কাপড়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ প্রস্তুত হয়েছিল ওয়ালমার্টের জন্য। তাজরীন ফ্যাশনস-এ হতাহত ব্যক্তিদের জন্য ৬০ লাখ (ছয় মিলিয়ন) ডলারের তহবিল গঠনের যে উদ্যোগ, সেখানে ওয়ালমার্টকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ওয়ালমার্ট জানায়, তারা দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজ করবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেবে না। সিয়ারস ও চিলড্রেনস প্লেসও সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেয়নি।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকেই জানায়, ওই দিন শেষ মুহূর্তে কারখশানা মালিকরা বেশি পোশাক তৈরির অর্ডার দেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত কাজ শেষ না হয় তখন পর্যন্ত কারখোনা তাদেরকে থাকার জন্য ব্যবস্থাপকরা শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে । এমন কি ফায়ার সংকেত বেজে উঠার পরেও তাদেরকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়ে ।
ক্ষতিগ্রস্থরা আরো জানান, কিছু কিছু কারখানায় এমন দুর্ঘটনার সময় বহির্গমন পথ খোলা থাকে ।কিন্ত এ গার্মেন্টসে বহির্গমনের পথ বন্ধ ছিল ।
‘জাতিসংঘের গাইডিং প্রিন্সিপাল অন বিজনেজ এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাজরীন ফ্যাশনের সাথে জড়িত বিক্রেতা প্রতিষ্টানগুলোকে এসব শ্রমিকদের মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে ।
আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সমিতি (বিজিএম ইএ), ইউরোপী সিএ্যন্ডএ নিট, হংকংয়ের লিএন্ড ফুং এসব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপুরনে যে পরিবার প্রতি এক লাখ টাকা করে দিয়েছে। তা তাদের জন্য যথার্থ নয় ।
তাই তাজরীন ফাশনের সাথে জড়িত বিদেশী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ক্ষতিপুরণ দেওয়া উচিত বলে দাবি করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচে ।
তারা বলছে, দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে। অনেক শ্রমিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত, অনেকে পঙ্গু। তাঁদের সন্তানদের যেন স্কুল ত্যাগ করতে না হয়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার এসকল বিদেশী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে।
শাহিন রহমান