
আগামি বছরের প্রথম মাসেই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) চালু হতে যাচ্ছে নতুন তিনটি সূচক। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী নতুন পর্ষদ গঠনের আগেই এ তিন সূচক চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই সূচক চালু করার ব্যাপারে সহায়তা করছে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই)। সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, চালু হওয়া নতুন তিনটি সূচক হলো- আইপিও, ইসলামি ও বেঞ্চমার্ক নামক তিনটি সূচক। আর এর জন্য ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীনভাবে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে পরীক্ষামূলক আইপিও ইনডেক্স চালু রয়েছে। এছাড়া ইসলামি ইনডেক্স চালু করার জন্য এনএসইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) অনুমোদিত কোনও শরীয়াহ্ বোর্ড না থাকায় এনএসইকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে বর্তমানে চালু থাকা সিএসইএক্স সূচককে বেঞ্চমার্ক সূচকে রূপান্তর করা হবে জানান যায়। এটা রূপান্তরের আগে নতুন সূচকের জন্য কি কি উপাদান প্রয়োজন তা জানাবে এনএসই। এ বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট এনএসই ও সিএসইর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে।
বিএসইসির অনুমোদনক্রমেই এসব সূচক চালু করা হবে। সূচক তিনটি দ্রুত চালু করার লক্ষ্যে সব রকম প্রস্তুতি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার বিকেলে এনএসইর সঙ্গে সিএসই কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। সূচকগুলো চালুর বিষয়ে এনএসইর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে সিএসই।
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, আইপিও সূচকের ভিত্তি পয়েন্ট হবে এক হাজার এবং ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারিকে ভিত্তি বছর ধরা হবে। ইতোমধ্যে এ ইনডেক্সের গুরুত্ব, বাস্তবমুখীতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে জমা দিয়েছে সিএসই।
বিনিয়োগের সুবিধার্থে কোম্পানির কর্মক্ষমতা, দর ওঠানামা ও গতিবিধি বোঝার লক্ষ্যে আইপিও ইনডেক্স গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ইনডেক্স দেখে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। এ ইনডেক্সের নামকরণ করা হয়েছে- সিএসই আইপিওএক্স।
আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলো প্রথম দুই বছর এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সূচকটি বছরে দু’বার পর্যালোচনা করা হবে। এটি রিয়েল টাইম বা বাস্তব সময়ের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে। এছাড়া প্রতিটি লেনদেন শূন্য সময় থেকে আপডেট করা হবে এবং অনলাইন ট্রেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে সিএসইর ওয়েবসাইটে সব ধরণের তথ্য প্রচারিত হবে। আর ৩ মিনিট পর পর ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ করা হবে। ইনডেক্স ম্যানেজমেন্ট কমিটি আইপিও সূচক গঠনের বিষয়ে সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করবে।
আইপিও সূচক গণনার সূত্র- (ফ্রি-ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অব ইনডেক্স কন্সটিটুয়েন্ট ভাগ বেজ মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) গুণণ বেজ ইনডেক্স ভ্যালু।
অন্যদিকে ইসলামি বিশেষ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে চালু করা হবে ইসলামি সূচক। সিএসই কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশে একটি বিশেষ মহল ইসলামিকভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাদের কথা বিবেচনা করে চালু করা হচ্ছে এ সূচক। এটি ওই বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ দিনের দাবি। এই ইনডেক্স চালু হলে তারা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কারণ মোট ইনডেক্স বা সুনির্দিষ্ট ইনডেক্স দেখে তারা শরীয়াহভিত্তিক লেনদেন বা বিনিয়োগ করতে পারেন না।
এ বিষয়ে সিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকমর্তা (সিইও) সৈয়দ সাজিদ হোসেন অর্থসূচকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে আমরা সব সময় কাজ করি। এরই প্রেক্ষিতে আইপিও সূচকের জন্য আমরা বিএসইসির কাছে আবেদন করেছি। এর প্রেক্ষিতে আইপিও ইনডেক্সের গুরুত্ব, বাস্তবমুখীতা, বাস্তব উদাহারণ এবং ইনডেক্স কনসট্রাকশন প্রসেস সম্পর্কে বিস্তারিত কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। যার প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিএসইসিতে জমা দিয়েছি।
অন্যদিকে আমরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কনসালটেন্ট বা পরামর্শক কোম্পানির শরীয়াহ্ বোর্ড দিয়ে ইসলামি ইনডেক্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শরীয়াহ বোর্ড ইসলামিক বিষয়গুলো অর্থাৎ কোম্পানিগুলো ইসলামি আইনকানুন মেনে চলে কি না তা যথাযথভাবে দেখবে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে আশা করছি আগামি বছর প্রথম মাসে অর্থাৎ ‘২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে আমরা তিনটি নতুন সূচক চালু করতে পারবো। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়েছি। ভারতের এনএসইর সহায়তায় এ সূচকগুলো চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।