আদেশ কারাগারে

karagarমুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের আদেশ আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাদপ্তরের মহা পরিদর্শক মাঈনউদ্দীন আদেশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়পুনর্বিবেচনা(রিভিউ) খারিজ এবং ফাঁসি কার্যকরের আদেশআমাদের কাছে পাঠিয়েছে। এখন আর রায় কার্যকরে আমাদের কোনো বাধা নেই।

তিনি জানান অল্প কিছু সময় আগেই এই আদেশের কপি তার হাতে এসে পৌছেছে।

উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার চেম্বার জজের আদেশে ফাঁসি কার্যকর স্তগিত হয়ে যায়। এর পর গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টর আপিল বিভাগে আসামি পক্ষের আবেদন করার সুযোগ আছে কি নেই তা নিয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত শুনুনি চলে।  শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে রায় দেন।

এই দিকে আদালতের এই রায়ের পরে আসামী পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পুরো রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে দাবী করেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান রায় কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই।

সুপ্রিম কোর্টর ওই বেঞ্চে  সকাল সাড়ে নয়টার দিকে  রিভিউ আবেদন গ্রহণের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।  মাঝখানে ৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে বেলা ১২ পর্যন্ত শুনানি চলে। একই বেঞ্চে গতকাল সকাল ১০টার দিকে শুনানি শুরু হয়।

এ সময় ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, রিভিউয়ের গ্রহণযোগ্যতার (মেনটেইনেবল কি-না) বিষয়ে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেয়নি। তার আগেই মূল রিভিউয়ের শুনানি কীভাবে হবে?

এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, “রিভিউ মেনটেইনেবল না- এটা আমরা বলছি না। আপনি যদি বলেন এটা ‘মেনটেইনেবল’, সে বিষয়েও কোনো তর্কে যাচ্ছি না। আপনাকে অন মেরিট শুনানির সুযোগ দিচ্ছি। আপনি গ্রাউন্ড বলেন।”

তারপর রাষ্ট্রপক্ষে রিভিউয়ের বিরোধিতায় যুক্তি দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মাঝখানে বেলা ১১টা থেকে আধঘণ্টা বিরতি দিয়ে শুনানি চলে বেলা ১১টা ৫০ পর্যন্ত। শুনানি শেষে বিচারকরা এজলাস থেকেনেমে যান। জানানো হয় অল্প সময়ের মধ্যেই আদেশ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মঙ্গলবার রাতে এক আকস্মিক আদেশে এই  জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।
তার ঘণ্টা তিনেক আগে  স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

তিনি জানান বুধবার প্রথম প্রহরেই (রাত ১২টা ১ মিনিট)মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। পরিবারের সদস্যরাও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করে যায়।

কারা কর্তৃপক্ষও ছিল প্রস্তুত।  কিন্তু কারাগারে চূড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক চেম্বার বিচারপতির বাড়ি থেকে বেরিয়ে বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত রাখার আদেশ পেয়েছেন তারা।
রাত পৌনে ১১টার দিকে কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাককে দেখা যায় কারাফটকে। তিনি কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সকাল ১০টা পর্যন্ত স্থগিত রাখতে চেম্বার বিচারপতির আদেশ কারা কর্মকর্তাদের জানিয়ে এসেছেন তারা।

এরপরই ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি ঝুলে যায়। ঘোষিত সময় ১২টা ১ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখা হয়েছে।