হিলি হানাদার মুক্ত দিবস আজ

hili_Shoudhoআজ ১১ ডিসেম্বর দিনাজপুরের হিলিমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ৭নং সেক্টরের আওতায় হিলি শত্রু মুক্ত হয়। হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীরা সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থনের পর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা হিলির সীমান্ত দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করলে আগে থেকে মাটির নিচে বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকা হাজার-হাজার পাক সেনা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাক সেনাদের আকস্মিক হামলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা। ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সময় সম্মুখ যুদ্ধে ৩৪৫ জন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য ও তিনশ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিয়া যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।

পরবর্তীতে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সুসংঘঠিত হয়ে পুনরায় ৮ ডিসেম্বর হিলি মুহাড়াপাড়া এলাকাসহ পাক সেনাদের বিভিন্ন আস্তানায় আকাশ ও স্থল পথে একযোগে হামলা চালায়। শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে নিহত হয় প্রায় পাঁচশ পাক সেনা। উদ্ধার হয় ৩০টি ট্যাংকসহ বিপুল পরিমান ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

হাকিমপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ভারতের মিত্রবাহীনির এই আত্মত্যাগ ও এখানকার নাম না জানা শহীদ শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দীর্ঘ ৪২ বছর পর এ বছর সরকার এখানে একটি “সম্মুখ সমর” নামে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী করেছে। গত ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুর সফর এলে এ স্মৃতি স্তম্ভটি উদ্বোধন করেন। তবে এখানে শহীদদের নাম ফলক না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি স্মরণ করে হিলিবাসী। সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহনে র‌্যালী, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বর্তমান যুগের কাছে তুলে ধরা হয় দিবসটির তাৎপর্য।