রবি ফসল নিয়ে শঙ্কায় রাজশাহীর কৃষকরা

krishi_mathটানা অবরোধের কারণে রবি মৌসুমে আবাদ নিয়ে বেশ শঙ্কা মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর কৃষকরা। ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন রবি মৌসুমের ফসল আবাদের। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে রবি মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের বীজ, সার ও তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবহন সুবিধা না থাকার অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বীজ, সার ও তেল। ফলে রবি ফসলের আবাদ নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার বীজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া সরবরাহ কম থাকায় ডিলাররা কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি দাম আদায় করছেন। খুচরা বাজারে এ দাম আরও বেশি। বাধ্য হয়েই বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। অনেকেই বেশি দামে না কিনে অপেক্ষা করছেন।

এদিকে সরকার নির্ধারিত ৬৮ টাকা ৫০ পয়সার ডিজেল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর ৬৭ টাকা লিটারের কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। পেট্রোলের দাম ৯৬ টাকা থেকে লাফিয়ে বেড়েছে ১৩০ টাকায়।

জেলার তানোর উপজেলায় চাঁদপুর গ্রামের কৃষক ইয়াদ আলী ও আবদুল গণি জানান, কৃষকরা এখন আলু চাষের জন্য জমির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় জমিতে অনেক সেচের প্রয়োজন হয়। যার জন্য নির্ভর করতে হয় ডিজেলের ওপর। কিন্তু হরতাল-অবরোধের অজুহাত দেখিয়ে খোলা বাজারে কেরোসিন কিনতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত উচ্চমূল্য। প্রতি লিটার কেরোসিন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে তারা জানান।

বাগমারা উপজেলার চাষি আনিসুর রহমান মৃধা জানান, হরতাল অবরোধের দোহাই দিয়ে ডিজেলের ইচ্ছে মতো দাম বাড়ানো দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে ডিজেল দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, রাজশাহীর সব উপজেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তা প্রতি ডিএপি সার ৫০, এমওপি সার ৪০ টাকা এবং ইউরিয়া সার ৮০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এনিয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের কৃষক জাইদুর রহমান বলেন, শুধু আলু আবাদের ভরা মৌসুমে অবরোধের অজুহাতে ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বেশি দাম আদায় করছেন। কৃষকদের অভিযোগ, ডিলারদের এ ধরনের কারসাজি কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা নিরব রয়েছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ীর কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউরিয়া সার কেনার জন্য খুচরা বিক্রেতার কাছে গেলে ইউরিয়া সারের সংকট রয়েছে বলে সার বিক্রি করতে রাজি হয় নি। এক পর্যায়ে সার বিক্রি করতে রাজি হলেও ওই খুচরা বিক্রেতা তার কাছে থেকে বেশি দাম নিয়েছেন। একই উপজেলার নবগ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিবস্তা ইউরিয়া কেনা হয়েছে ৭৮০ টাকা দামে। প্রতিবস্তা সার ৮৮০ টাকায় বিক্রি হলেও সংকট রয়েছে বলে চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না।

তানোরের বিএডিসির সার ডিলার আকতার আলী ও তালন্দ বাজারের ডিলার বাবুর দাবি, চাহিদার তুলনায় নভেম্বর মাসে সারের বরাদ্দ কম ছিল। এ কারণে বাইরে থেকে সার কিনে বেশি দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে, ডিসেম্বর মাসে সারের চাহিদা নিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে জানানো হয়েছে। চাহিদা মতো বরাদ্দ পাওয়া গেলে সঙ্কট থাকবে না বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রাশসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেউ অতিরিক্ত দামে সার, বীজ ও ডিজেল বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।