
ভুল তথ্যে প্রত্যারিত অনেকেই হয়,কিন্তু সে অন্যের দ্বারা; আপন বাবা কতৃক নয়। অথচ ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগোতে বসবাসকারী অ্যাঞ্জেলা পালমার এতোটাই ভাগ্যহত যে, ৪৪ বছর ধরে বাবা কতৃক প্রতারিত হয়ে আসছিলেন! শুধু তাই নয়; বাবার মিথ্যে কথা বিশ্বাস করে এই এতোটা বছর পর্যন্ত তার সান দিয়াগোর বাসায় অপহৃতও ছিলেন তিনি! সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ায় বাসরত মায়ের কাছ থেকে ফেইসবুকের মারফতে এসব কথা জানতে পারেন পালমার। এর আগ পর্যন্ত জানতেন, অল্প বয়সে মা তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন এতিমখানায়!
পালমারের জন্ম জার্মানিতে। মা হেলগা সিমেকির সাথে বনিবনা না হওয়ায় বাবা ক্ল্যাউজ হোসনিক তাকে অপহরণ করে চলে আসেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানেই বাবার আদরে বেড়ে উঠেছেন তিনি। বাবার মুখ থেকে এতোদিন পর্যন্ত জেনে এসেছেন, মা তাকে কোলের শিশু অবস্থায় এতিমখানায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু গল্পের অপর সত্যগুলো জানতে পেরেছেন মাত্র একসপ্তাহ আগে, ফেইসবুকের একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সূত্র ধরে।
ইয়াহু সাইনকে জানানো পালমারের গল্পটা এরকম, একসপ্তাহ আগে যখন ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট আসে, পরিচয় না থাকায় সিমেকিকে অনেকের মতো গ্রাহ্যই করেনি প্রথমে। কিন্তু সিমেকি একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠালে ব্যাপারটাকে আমলে নিতে বাধ্য হই আমি। ক্ষুদে বার্তায় সিমেকি যখন জানালেন, আমি তার মেয়ে, কথাটা শুনে আমি প্রচন্ড ধাক্কা খাই। যেহেতু আমি জানতাম মা আমাকে শিশু অবস্থায় পরিত্যক্ত মনে করে এতিমখানায় ফেলে চলে গেছেন, তার সাথে শুরুতে কথা বলতেও আমার খারাপ লাগতো।
প্রথমে তার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করিনি, কিন্তু যখন তিনি একের পর এক আমার জন্ম সার্টিফিকেট, আমার শিশুকালীন ছবি, আমার শৈশব সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে আরম্ভ করেন তখনই আমি তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করি। এরপর আরও এমন কিছু তথ্য জানান যা কেবল একজন মায়েরই জানার কথা।
এভাবে ফেইসবুক আলাপনের মাধ্যমেই পালমার জানতে পারেন তার বেড়ে উঠার পেছনের গোপন সত্যগুলো। জানতে পারেন, তার অ্যালকোহোলিক বাবা মাকে প্রায়শই মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। সহ্য করতে না পেরে সিমেকি যখন ঘোষণা দেন, মেয়েকে নিয়ে ক্রোয়েশিয়ায় পাড়ি জমাবেন তখনই বাবা ডাক্তার দেখানোর নাম করে পালমারকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। শুধু তাই নয়, মেয়েকে জিম্মি করে সিমেকিকে তার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতেও বাধ্য করেন।
পালমার আরও বলেন, ষোল বছর বয়সে মায়ের সাথে আমার একবার ফোনে কথা হয়েছিলো, কিন্তু যখনই মনে হয়েছিলো মা আমাকে পরিত্যক্ত মনে করে এতিমখানায় ফেলে রেখে গিয়েছেন তখনই ফোনটা আমি রেখে দিই। কিন্তু এখন আমি জানি, এই মা ছাড়া আমার কেউ নেই।
টাকা সংগ্রহ অভিযানের সূত্র ধরে ঘটনাটা উঠে আসে মিডিয়ায়। জানা গেছে, ফান্ড রাইজিং ওয়েবসাইটের সাহায্যে টাকা জমাছেন পালমার। প্ল্যান টিকিটের টাকা হাতে আসলেই ক্রোয়েশিয়া থেকে মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন তিনি।