ট্যানারিতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৩০ হাজার শ্রমিক: আল-জাজিরা

b-river_latherবিশ্বের ফ্যাশন হাউজগুলোতে চামড়াজাত পণ্যর চাহিদা মেটাতে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে শুধু ঢাকা থেকেই বছরে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প । আর এই বিশাল পণ্যর চাহিদা মেটাতে ঢাকার হাজারিবাগেই ২০০ ট্যানারিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্চে ৩০ হাজারেরও  বেশি শ্রমিক। তবে বিরাট আয়ের সম্ভাবনাময় এই খাতটির আরেকটি অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকও রয়েছে। আর সেই বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ট্যানারি থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২১ হাজার কিউবিক বিষাক্ত বর্জ্য ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে মেশে। যার মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার হওয়ার মতো উপাদান। এছাড়া এই পানি নদীতীরবর্তী এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে ফেলেছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মূত্রনালী, কিডনিজনিত রোগ, চর্মরোগসহ ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগে।ফলে চিকিৎসাবাবদও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আক্রান্তদের গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ২০০৯ সালে এই ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে কোনো স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়।

এর প্রেক্ষিতে একটি পরিবেশ বান্ধব ট্যানারি জোন তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বর্তমান সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্যানারি মালিক এবং সরকারের মধ্যে কোনো ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারার কারণে স্থান্তরের বিষয়টি বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া।

ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়ন এর প্রধান আব্দুল মালিক জানান, বিলাসজাত দ্রব্য হিসেবে চামড়াজাতপণ্য  বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত । কিন্তু এই পণ্য  উৎপাদনে আমরা যারা শ্রমিক দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। তাদের স্বাস্থ্যঝুকির নিরাপত্তার বিষয়ে শুধু মালিক পক্ষ নয় সরকারও নজর দেন না ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিবছর ১৪ মিলিয়ন কাঁচাচামড়া এসব ট্যানারিতে আসে । তারপর সেগুলো  প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় ।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি  চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ইতালিতে এবং ইউরোপে ।এ বছরে  বাংলাদেশ এই দুই দেশে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো।

ঢাকা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রব রেনল্ড জানিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে হাজারিবাগ একটি। ইউরোপীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের পবিবেশ সংস্থাও এখানকার দুরাবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ।

বাংলাদেশের পবিবেশ আইনজীবী সমিতির সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, আপনি হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলো যদি পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখেতে পাবেন  এখানকার অবস্থা কতটা খারাপ। সুতরাং বাংলাদেশের ট্যানারিগুলোতে কাজের অবস্থার উন্নয়নে কি করা যেতে পারে ? এই ক্ষেত্রে কারখানা মালিকদের কি করার থাকতে পারে। সরকার এবং বড় বড় আমদানিকারক দেশগুলোরই বা কি করা উচিত? সে বিষয়ে এখন ভাবতে হবে।

হাজারিবাগের দূষণ ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। স্থানীয় লোকজন এবং এর শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আমি তিন তিন বার হাজারিবাগে গিয়েছি, প্রত্যেকবার আমি অসুস্থ হয়েছি বলে জানান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর গবেষক রিচার্ড পিয়ার্সহাউজ।