chittagong

chttঅবরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী

অবরোধ ও হরতালের  গ্যাঁড়াকলে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী। গেল ১০ দিনে একটিও কার্যদিবস পায়নি ব্যবসায়ীরা । আগামি চারদিনেও পাবে না কোনো কার্যদিবস। রাজনৈতিক নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, একটি হরতাল অবরোধের সময়সীমা শেষ হবার আগেই আরেকটি হরতাল-অবরোধের ছক হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ।

টানা হরতাল ও অবরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ৯২ শতাংশের বেশি আমদানি-রপ্তানি নির্ভর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম। দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারী বাজার চট্টগ্রমের চাক্তায়-খাতুনগঞ্জে বেচা-কেনা কমে গেছে ৯০ শতাংশেরও বেশি। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে পোশাক শিল্পসহ বাণিজ্যিক নগরী খ্যাত চট্টগ্রামের সহস্রাধিক শিল্প কারখানায়।

হরতালের কারনে আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকলেও  ব্যাংক  ঋণের বিপরীতে উচ্চহারে সুদ, কর্মচারির বেতন, দোকান ও গোডাউন ভাড়াসহ  আনুষঙ্গিক  খরচ থেমে নেই। সেই সঙ্গে হরতালের কারণে বাড়ছে পরিবহন খরচ আর বন্দরে কন্টেইনার খালাসে গুণতে হচ্ছে  অতিরিক্ত মাশুল। গেল কয়েকদিনে  বন্দরে ২৪ হাজার ৬০০ টিইইউ’স (প্রতিটি ২০ বর্গমিটার হিসাবে ) কন্টেইনারের স্তুপ জমেছে। দৈনিক যেখানে  ১৮০০ টিইইউ’স খালাশ করা যেত হরতাল ও অবরোধে তা কমে যায় ৮০ শাতাংশের বেশি । তাই প্রতিদিনই বাড়ছে কন্টেনারের স্তুপ।

গেল সাতদিনের ছয়দিন হরতাল অবরোধ ও একদিন সপ্তাহিক ছুটির কারণে কোনো কার্যদিবস না পাওয়ায় এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। আগামি চারদিনের তিনদিন অবরোধ ও একদিন সপ্তাহিক ছুটি থাকায়  পাওয়া যাবে না কোন কার্যদিবস।এমন অবস্থায় কিছুতেই লোকসান  সামাল দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। এদিকে নতুন করে বিনোয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান,  দেশের এরূপ অবস্থায়  আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় অচল হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈদেশিক বিনিয়োগ, আমদানি- রপ্তানি, ব্যাংক লোনের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া  চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ পণ্য আমদানি রপ্তানি করা হয়। দেশের গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি পণ্য বা কাঁচামালের  ওপর যেমন বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয় তেমনি রপ্তানিতেও নির্ভর করতে হয় বন্দরের ওপর। মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় কোটি টাকার পণ্য ক্ষতি হচ্ছে। তাই ঠিক সময়ে পণ্য যেমন বন্দরে পৌঁছানো যাচ্ছে না তেমনি আনাও যাচ্ছে না ।

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন  চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম অর্থসূচককে বলেন, গেল সাতদিনে হরতাল অবরোধ থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ ছিল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। শুধু চেম্বার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে আট হাজার কোটি টাকার মতো। তাই হরতালের কারণে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ব্যাংক সুদ, কর্মচারীদের বেতন, গোড়াউন ও অফিস ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বন্ধ থাকে না। সেই সঙ্গে হরতালে মহাসড়কে নাশকতার ভয়ে  বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে না পাড়ায় অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়। অতিরিক্ত মাশুল মওকুফের জন্য নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর নিকট সকল ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

তৈরী পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথমসহ সভাপতি নাসির উদ্দিন অর্থসূচককে বলেন, “একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প ব্যবসায়ীদের দৈনিক ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা। জিএসপি বাতিলসহ নানান সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো সময়মতো কাচাঁমাল না পাওয়া, পোশাক কারখানা স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে না পারায় উৎপাদন কমে গেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এদিকে  বায়ারদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারায় অর্ডার বাতিল  হবার পাশাপাশি ‘নন ডেলিভারি ক্লেইম’ও করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। প্রতি সপ্তাহ জুড়ে হরতাল অবরোধ থাকায় চরম সংকটে পড়বে দেশের অন্যতম এ শিল্পটি। রাজনৈতিক নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই । ”

খাতুনগঞ্জের মেসার্স মোহাম্মাদিয়া ট্রেডার্স’র স্বত্বাধিকারী ও ব্যবসায়ী নেতা মোজাম্মেল হক মিন্টু অর্থসূচককে বলেন, “খাতুনগঞ্জে চার সহস্রাধিক দোকান রয়েছে । অবরোধ ও হরতালে দৈনিক গড়ে ২০০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। এসব ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে ইতোমধ্যে কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার যারা আছে তাদের নিয়মিত লোকসানের কারনে পুঁজি কমে গেছে। নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত  হচ্ছে না কেউ। ফলে ব্যবসায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে হরতালের আওতা মুক্ত না রাখলে হলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়বে। এমনটি জেনেও যারা এমন সহিংস কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের ঘৃণা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।”

এআর