ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

brac_bank

brac_bankব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ থাকলেও এতদিন তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলদেশ ব্যাংক। বড় বড় এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে শুধু চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। এসব চিঠির কোনো সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ব্যাংকটি অনেকটা লাগাম ছাড়া ভাবে কাজ করে গেছে।

 

সম্প্রতি অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা আত্নসাতের ঘটনায় আর চুপ করে থাকতে পারেননি স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। গত ২ ডিসেম্বর গভর্নর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি কমিটি গঠন করে তদন্তে নামার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার ব্যাংকটির যাবতীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্র্যাকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গত ২ ডিসেম্বর ওবায়দুর রহমান নামের একজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তার অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন ২৭ নভেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক অভিনব কায়দায় তার অনলাইন ব্যাংকিং হিসাব থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকা উত্তোলনের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে সংরক্ষিত তার ডাটাবেজ থেকে প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ই-মেইল, ন্যাশনাল আইডি এবং তার ব্যাংক হিসাব সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা এ কাজটি করেছে। তিনি ব্যাংকের কাছে পরের দিনই এর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে তিনি তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন।

একইভাবে আবুবকর সিদ্দিক ও এবিএম মুসফিক সালেহীন তাদের ৪৫ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেন। তারা ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। কোন প্রতিকার না পেয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্রয় নেন।

এছাড়া চট্টগ্রামে ব্র্যাক ব্যাংকের হলিশহর শাখার গ্রাহক মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের গ্রাহক সুমন কুমার দেব, গাজীপুর শাখার গ্রাহক খোরশেদ আলম, ঢাকা মিরপুর শাখার গ্রাহক রাকিবুল হাসান একই ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেন।

এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে হয়রানির একাধিক অভিযোগ এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে। এদের মধ্যে ঢাকার তোপখানা রোডের আবিদ টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী আবিদ হাসান, নয়াপল্টনের আমেনা ইন্টারপ্রাইজের নাসির উদ্দিন এবং কাউছার নামের এক বিকাশ এজেন্টসহ কয়েকজন ১১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের বিকাশ একাউন্ট থেকে সিম জালিয়াতি করে টাকা আত্নসাতের  অভিযোগ করেন। এছাড়া ঠাটারি বাজারের ফরিদ ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ফরিদ নামের অপর এক বিকাশ এজেন্ট তার একাউন্ট থেকে সিম জালিয়াতি করে ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করেন।তিনি বিকাশ গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে ফোন করে যেসব নম্বরে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে সেসব একাউন্টগুলো স্থগিত রাখার জন্য বলেন। কিন্তু বিকাশ থেকে তাকে কোন সহযোগীতা করা হয়নি এমনকি ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চাইলেও তারা কোন সহযোগীতা করেনি বলে তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।

বিকাশের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করেন রাঙ্গামাটি কম্পিউটার ও টেলিকম ব্যবসায়ী মালিক কল্যান সমিতি। গত ১ জুলাই তারা বিকাশের প্রতারণা থেকে বাঁচতে এবং প্রতারণা রোধে আইনি পদক্ষেপ নিতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয়ের কাছে প্রেরণ করে। অর্থমন্ত্রনালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দেয়।

সম্প্রতি মিরপুরের ওবায়দুর রহমানের অভিযোগটি আমলে নিয়ে গভর্নর এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে যায়। কিন্তু তারা সেখান থেকে কোন সন্তোষজনক ফলাফল পায়নি বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে অর্থসূচককে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ অভিযোগ অনলাইন ব্যাংকিং এবং তাদের মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে। পর্যবেক্ষক দলটি মূলত এসব নিয়েই তদন্ত করছে। মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতির কারণ উদঘাটন এবং কিভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়েই কাজ করবে এ দলটি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্র্যাক ব্যাংক ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও এতদিন তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। ব্র্যাকের প্রতি গভর্নরের আনুকূল্যের কারণে এতদিন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠানটির অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেও তা কতটা কার্যকর হবে এবং আদেও কোন পদেক্ষপ নিতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।