
দেশেরর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হরতাল ও অবরোধে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পরিবহন সমস্যার কারণে খাদ্য পণ্যের পাশাপাশি খাদ্য বহির্ভূত পণ্যেও গত পাঁচ বছরের মধ্যে নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস্)। এই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৫ ভাগ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশকালে এ কথা জানান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মাসিক ভিত্তিতে অক্টোবরের থেকে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা বর্তমান সরকারের আমলে এবারই প্রথম। ২০০৫ ও ২০০৬ ভিত্তি বছর ধরে পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির তালিকা প্রকাশ করা হয়। যাতে অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ০৩ ভাগ কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৫ ভাগ।
পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে অক্টোবরে খাদ্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩৮ ভাগ কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ ভাগ। খাদ্য পণ্য ছাড়াও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ০২ ভাগ কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৮ ভাগ।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে মোস্তফা কামাল বলেন, চাল, ডাল, মাছ ও অন্যান্য দ্রব্যাদির বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি হয়েছে। আমি বলতে পারে পরিবহন ব্যবস্থার অবনতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। হরতাল ও অবরোধের কারণে সাপ্লাই কম হচ্ছে। হরতাল অবরোধ রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের উপর প্রভাব ফেলে। আমদানি- রপ্তানি সঠিক উপায়ে হয়নি বিধায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।তবে অর্থনীতিতে যেভাবে স্থবীরা দেখা দিয়েছে সেই তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,যে রিকসায় আগে ৩০ টাকা আসতে পারতাম তা এখন ৬০ টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া গ্রাম অঞ্চলে আমন ও বোরো কাটা শুরু হয়েছে যার কারণে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মূল্য বৃদ্ধির কারণে মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে।
পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে অক্টোবরে জাতীয় মজুরী হার ছিল ৯ দশমিক ০২ ভাগ কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ০৯ ভাগ। মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়,পণ্যের দাম ঢাকা শহরে বৃদ্ধি পায় কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে কমে যায়। গ্রামে মূল্য কমলেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে থাকে কৃষি পণ্যের দাম কমে যায় বলে।
এছাড়া অবরোধের কারণে গ্রাম অঞ্চলে অনেক জায়গায় ৪ টাকায় ফুলকপি বিক্রি হয়অথচ ঢাকায় তা বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। অনেক দুগ্ধ খামারি দুধ ফেলে দিচ্ছে অথচ ঢাকা শহরে এর সরবরাহ করতে পারছে না। এক কথায় রাজনৈতিক অস্থিরতায় গ্রাম ও শহর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির ব্যপক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে বলে জানোনো হয়।’ বিবিএস এর রিপোর্ট এ বলা হযেছে,চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস, শাক সবজি, দুধ ও অন্যান্য বিবিধ সামগ্রী বৃদ্ধি কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বরে এখাতগুলোতে অক্টোবর ২০১৩ এর তুলনায় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ০.৪৭ ভাগ। এছাড়া পরিধেয় বস্ত্র, বাড়িভাড়া, আসবাব পত্র, গৃহস্থলী, পরিবহন, চিকিৎসা সেবা,শিক্ষা উপকরণের বৃদ্ধির কারণে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি হয়েছে।এ খাতে অক্টোবর ২০১৩ তুলনায় নভেম্বর ২০১৩ তে মূল্যস্ফীতি হযেছে ০.২৬ ভাগ।তবে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হযেছে পরিবহন খাতে। হরতাল ও অবরোধের কারণে এ খাত ধমকে দাড়িয়েছে। বিবিএস থেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়দেশের চলমান অস্থিরতা চলতে থাকলে আগামিতে সকল পর্যায়ে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। এইউ নয়ন