কাদের মোল্লার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ

ben.sachtimes.comএকাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়া্তের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লার মামলার চূড়ান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে মৃত্যুদণ্ডকেই কাদের মোল্লার জন্য ‘একমাত্র যথার্থ শাস্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে  আপিল বিভাগ থেকে ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, “কাদের মোল্লার অপরাধসমূহ এতোই পৈশাচিক যে, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া কোনো সাজাই তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই তার প্রাপ্য। তার অপরাধের ফলাফল সমগ্র জাতিকে অনন্তকাল বয়ে বেড়াতে হবে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বাংলাদেশের বাইরেও তার অপরাধসমূহ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

এর আগে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের সাজা বাতিল করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন—বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

আদালত রায়ের অভিমতে আরও বলেন, “কাদের মোল্লার এই অপরাধ মানবজাতির বিবেককে দারুণভাবে আহত ও স্তম্ভিত করে। এ কারণেই ৬ নম্বর অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার রায় অবিবেচনাপ্রসূত এবং সাজা প্রদানের নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের তিন নম্বর সাক্ষী এই ঘটনার স্বাভাবিক সাক্ষী এবং এই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী, যাকে পক্ষপাতদুষ্ট সাক্ষী বলা যায় না। এই অপরাধের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডই কাদের মোল্লার যথাযর্থ দণ্ড।”

বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, “সরকারের দায়ের করা আপিল রক্ষণযোগ্য। চার নম্বর অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশ বাতিল করে এই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। এছাড়া ছয় নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বাতিল করে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মামলা নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে এই প্রথম স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় আপিল বিভাগে রায় হলো।

জানা গেছে, আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করবে আসামিপক্ষ।

তবে আপিল বিভাগের এ রায়ের পর আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সরকার ও আসামিপক্ষ পরস্পরবিরোধী মত প্রকাশ করেছে।সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, “এ রায়ে আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তার সঙ্গে দ্বিমত ব্যক্ত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তারা বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ করা যাবে। কারণ, রিভিউ করা একটি সাংবিধানিক অধিকার।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে রিভিউ আবেদন নাকচ হলে জেল কোডের ২১ থেকে ২৮ দিন হিসেবে ডিসেম্বরেই কার্যকর হতে পারে কাদের মোল্লার রায়।

 

নয়ন