
রাজধানীর সোহরওয়ার্দী উদ্যানে যুব লীগের ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশে নির্বাচন চান না। তিনি দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে ধবংস করার পাঁয়তারা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
প্রধামন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে নির্বাচন চান না। আর আমাদের সরকার দেশে ৫ হাজারেরও বেশি নির্বাচন করেছে। কোনো নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলে নি।
তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দেশ ছিল সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের আস্তানা। আর এখন দেশে বইছে উন্নয়নের রোল মডেল। দারিদ্রের হার ২৬ শতাংশের নিচে নেমেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। সামনে ক্ষমতায় গেলে প্রয়োজনে আমরা আরও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করবো।
প্রধামন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যদি স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়েরও দায়িত্ব চান তাও আমি দিতে রাজি আছি। তবু নির্বাচনে আসেন। আগেই বলেছি যতগুলো মন্ত্রনালয় চান দিতে রাজি আছি। এখনও বলছি নাশকতা পরিহার করে নির্বাচনে আসেন।
ছোট ছোট শিশুদের দিয়ে বিএনপি সন্ত্রাসী ও বোমাবাজি করার ট্রেনিং করাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাচ্চাদের দিয়ে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করবেন না। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তারা কিভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করবে? আন্দোলন করলে রাস্তায় নামেন, দয়া করে আন্দোলন দিয়ে লুকিয়ে থাকবেন না। রাস্তায় নামলেই দেখা হবে কার আন্দোলনে কত জোর আছে?
বিরোধী দলীয় নেত্রীর জন্ম বাংলাদেশে নয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জন্ম ভারতের সিলিকুড়ির চা বাগানে। যদি তার জন্ম বাংলাদেশে হত তবে তিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারতেন না। এরা আন্দোলনের নামে সিএনজি চালকদের গায়ে পেট্টাল ঢেলে আগুন দিয়ে মানুষ মারে। এদের মাঝে কোনো মানবিকতা নেই। এরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে।
তিনি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বায়ত্বসাশিত প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজে সরকার বাঁধা সৃষ্টি করে নি আর ভবিষ্যতে ও করবে না। বরং আমাদের সরকার নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এই সরকারের আমলে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আসার পর দেশ জঙ্গবাদের দুর্নাম থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিশ্ব দরবারে দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
হাসিনা বলেন, একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে যুবসমাজ। আমরা যখনই সরকারে আসি তখনই যুবকদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। এ পর্যন্ত ২৮ হাজার কোটি যুবকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের মেয়াদে এ পর্যন্ত ১ কোটি যুবকদের বিভিন্ন চাকরিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি খাতকে উম্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ বাড়িয়েছিলাম বিএনপি এসে তা কমিয়ে দিয়েছিল। তারা দুনীতি করে টাকা পয়সা নিয়ে গেল, মানি লন্ডারিং কর টাকা বিদেশে পাচার করল।
শেখ হাসিনা দাবি করে বলেন, আমরা আমাদের সময় দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। দেশে এখন বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। এর আগে সমাবেশে ‘শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী।
তিনি আরও বলেন, দেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে মানুষ সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। বর্তমানে দেশে তিন কোটি ছিয়াশি লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আর দশ কোটি সিম ব্যবহার করছে গ্রাহকরা। প্রধামন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে বলেন, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তিনি আনেদালনের নামে যারা দেশে মানুষ হত্যা করে তারা কখনো জনগণের ভাল বন্ধু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ সেলিম, যুবলীগের সাধারণ-সম্পাদক হারুণ চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।