বর্তমান অস্থিতিল রাজনীতির ফলাফলই হল রামু ও সাথিয়ার ঘটনা। আর এসব সাম্প্রদায়িক ঘটনায় আওয়ামী লীগ দখলদারের ভূমিকা পালন করছে। অথচ সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগেরই ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অপকর্মের ক্ষেত্রে তাদের ঐক্যের কোনো অভাব নেই বলে জানালেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মাদ।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মাদ বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে এমন একটা সময়ে আমরা আলোচনা করছি যখন এ সমস্যা শুধু সংখ্যালঘুতে নয়। বরং এটি বর্তমানে সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগুরু পর্যন্ত সবাই অনিশ্চয়তায় আছে। আর এসব ঘটনার পেছনে গুজব এবং প্রত্যক্ষ উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।’
বর্তমান সময়ের রাজনীতি এবং অর্থনীতি ডমিন্যান্ট প্রক্রিয়ায় চলছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান জাতিগত বিদ্বেষ নিয়ে শুরু হয়েছিল। এখন সেটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। । সাধারণ মানুষের কথা কেউ শুনছে না । এখন রাজনীতির কেন্দ্রীয় জায়গাটা হল দখল এবং লুণ্ঠন। আর সেটা সংখ্যালঘু ও দুর্বলদের ওপর দিয়েই করা হয়।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি হামিদা হোসেন বলেন, ‘২০০১ সালে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার মামলার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি তাই এখন সবাই মনে করে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করাই যায়। এটা শুধু রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে না। এটা আমাদের সমাজের ভেতরে ঢুকে গেছে। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণভাবে দায়ী।’
বাংলাদশে পুলিশ সাম্প্রদায়িক আচরণ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। পুলিশে আচরণ দেখে সংশয় জাগে। পুলিশও বা কেন সেভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না তা নিয়েও ভাববার বিষয় রয়ে যায়। পুলিশকে সুশৃঙ্খলভাবে শক্তিশালী করতে হবে।’
রামু ও সাথিয়ার ঘটনা শুধু উদাহরণ। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এমন আরও অসংখ্য ঘটনা আছে মন্তব্য করে নারীনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ভাবে মানুষকে নিস্ব করার ঘটনা এখনই প্রথম ঘটছে না। অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হয় তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করা হয়। আর এতে তারা রাজনৈতিক পায়দা লুটে নেয়।’
সব ধরনের নাগরিককে সমান ভাবে দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু রাষ্ট্র এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, সবার অধিকার সমান হলেও কেউ কেউ বেশি সুযোগ পায়। প্রশাসনও এ ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করে না। কেউ সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নেয় না, সংখ্যালঘু বিষয়টাকে সৃষ্টি করা হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘ঢাকায় সাইদীর ফাঁসির রায় হয়, শাহবাগে আন্দোলন হয় অথচ হামলা হয় নোয়াখালীর হিন্দু বাড়িতে। এটা খুবই অস্বাভাবিক। এটা হল প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতা। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: সাথিয়া অধ্যায়’ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং সভাপতিত্ব করেন নারী নেত্রী শিপ্রা বোস। এছাড়াও এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাইদ খান, মানবাধিকার কর্মী অরুপ রাহী, ব্লগার বাকী বিল্লাহ, অভিনয়শিল্পী আজাদ আবুল কালাম এবং বন্যা মির্জা প্রমুখ।
জেইউ/এআর