
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নে মাইনুল ইসলাম ও সাবিনা বেগমের পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। স্বামী-স্ত্রী কঠোর পরিশ্রম করেও পরিবারের সদস্যদের ঠিকমতো দুবেলা খাবার জোটতো না। তবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ সাবিনার পরিবারের অভাব অনটন দুর করে এনে দিয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।
সাবিনা এ প্রকল্প থেকে ৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল পালন শুরু করে। এক বছরে ছাগল পালন করে তার আয় হয় ২ হাজার টাকা। ঋণের টাকা পরিশোধ করে প্রকল্প থেকে আবার ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরু পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। সাবিনার এখন নিজস্ব সঞ্চয় হচ্ছে ৪ হাজার ৪শ টাকা এবং বোনাস ৪ হাজার ৪শ টাকা। বর্তমানে সবমিলিয়ে ৮ হাজার ৮শ টাকার তহবিল রয়েছে সাবিনার হাতে।
উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের আতিকুর রহমানের স্ত্রী বিবি আরা ২০১২ সালের জুন মাসে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ হতে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ছাগল পালন শুরু করেন। এক বছর ছাগল পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হলে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে প্রকল্প থেকে আবার ১৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ছাগল পালনের পাশাপাশি বিবি আরা সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে দর্জির কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে তার নিজস্ব সঞ্চয় এবং বোনাস মিলে ৮ হাজার ৮শ টাকার তহবিল রয়েছে। ছাগল পালন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিবিআরার।
উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নের বংপুর গ্রামের আর্জেদ আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এ প্রকল্প থেকে ১৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাভী পেয়ে পালন করে। এক বছরে গাভীটির একটি বাছুর হয়। পরবর্তীতে গাভী ও বাছুরটি ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এরমধ্যে ১৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করে পুনরায় নতুন করে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। আনোয়ারা বেগম গরু পালন করার পাশাপাশি শাক সবজি চাষ করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পেরে তিনি। বর্তমানে আনোয়ারা বেগমের নিজস্ব সঞ্চয় ৪ হাজার ৮শ টাকা এবং বোনাস ৪ হাজার ৮শ টাকা রয়েছে। সাবিনা, বিবিআরা ও আনোয়ারা বেগমের মতো গোদাগাড়ী উপজেলার হাজার হাজার হত দরিদ্র পরিবার ‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্প থেকে সুবিধা নিয়ে স্বাবলম্বি হয়েছে।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে উপজেলার মোহনপুর, পাকড়ী, রিশিকুল ও দেওপাড়া ইউনিয়নে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ৩৬টি সমিতি তৈরি করে ২ হাজার ১শ ৬০টি হত দরিদ্র পারিবারের সদস্যকে হাঁস মুরগী পালন, গবাদী পশু পালন, মৎস্য খামার, সবজি চাষ, নার্সারী, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, কুটির শিল্প, ফুল চাষ, দার্জি, মৌমাছি চাষ, মিষ্টিজাত দ্রব্য তৈরি, ক্ষুদ্র শিল্প বাঁশ/বেত সামগ্রী তৈরি, কাঠের কাজ, শস্য চাষ, কাগজের ঢোংড়া/ প্যাকেট তৈরি, পুতুল খেলনা তৈরি, মাশরুমচাষ, কলাচাষ, চায়ের দোকান, সমন্বিত কৃষি উৎপাদনসহ ৪৫টি বিষয়ের ওপরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এদের মধ্যে থেকে ৩শ ৮৪ জনকে ২৮ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ প্রদান করা হয়। সদস্যদেরকে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ঋণ গ্রহিতারা এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী নুরে তানজিলা বলেন, প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করার পর সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটরিং করার পাশাপাশি সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহায়তা করার কারণে এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত হত দরিদ্র পরিবারগুলো দ্রুত সাফল্য পাচ্ছে।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু হাসান মোহাম্মদ সাইদ বলেন, সরকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, বাসুদেবপুর, মাটিকাটা, গোগ্রাম ও গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নে ২০৬৭টি হত দরিদ্র পারিবারের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণ প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।
এআর