
সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি-বিদ্যুত খাতের কোম্পানি ডেসকো।সরকার পাইকারি পযায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় ডেসকোর ব্যয় বেড়েছে।কিন্তু খুচরা পর্যায়ে আগের দাম বহাল রাখায় কোম্পানিটির আয় বাড়েনি।ফলে মুনাফা কমে যাচ্ছে বছরখানেক আগেও ব্লুচিপ হিসেবে খ্যাত এ কোম্পানির।
চলতি বছরের সর্বেশষ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর)কোম্পানির নেট মুনাফা ৯৫ শতাংশ কমে গেছে।শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমে ১ টাকা ২৯ পয়সা থেকে ৬ পয়সায় নেমেছে।চলতি প্রান্তিকে অবস্থা আরও নাজুক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশংকা।
অবশ্য পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় মুনাফা পতনে ভূমিকা রেখেছে।আলোচিত প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় এবং অবচয়ও বিপুল পরিমাণে বেড়েছে।
ডেসকোর প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে,কোম্পানিটি ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
আলোচিত প্রান্তিকে বিদ্যুত কেনার পেছনে ডেসকোর ৬৪২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছিল ৫৪০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১০২ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ।
অন্যদিকে,চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে কোম্পানিটি পেয়েছে ৬৯১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।যা আগের বছরের একই ৬৩৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় বিক্রি খাতে আয় বেড়েছে ৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা প্রায় ৮ শতাংশ।
বিদ্যুত কেনায় ১৯ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে বিদ্যুত বিক্রির আয়ে মাত্র ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কারণেই কোম্পানিটির মুনাফা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ব্যবধান বেড়ে যাওয়া,কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অদক্ষতা,অপচয় ইত্যাদি কারণে প্রতিবছরই কোম্পানির মুনাফা ও ইপিএস কমছে। লভ্যাংশ হিসেবে প্রতি বছর বোনাস দেওয়ায় নিট মুনফার চেয়ে বেশি হারে কমছে এর ইপিএস।২০০৯ সালের পর থেকেই এ নিম্নমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ১২ টাকা।২০১০ সালে তা কমে ১৭ টাকা ২২ পয়সায় নেমে আসে।পরের বছর এটি কমে হয় ৭ টাকা ১০ পয়সা; ২০১২ সালে আরও কমে ৩ টাকা ২২ পয়সা হয়।
প্রথম প্রান্তিকের ইপিএসকে এনুয়ালাইজড (বার্ষিকীকরণ)করা হলে বছর শেষে এর ইপিএস দাঁড়াতে পারে এক টাকারও কম,২৫ পয়সার কাছাকাছি।সংশ্লিষ্টদের আশংকা চলতি প্রান্তিক শেষে কোম্পানির ইপিএস ঋণাত্মক হয়ে যেতে পারে,অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আয়ের পরিবর্ শেয়ার প্রতি লোকসান হতে পারে কোম্পানিটির।কারণ শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ শতাংশের মত কমে যায়।বিদ্যুতের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ব্যবধান কমে যাওয়ায় গ্রস মার্জিনের হার অনেক কমে গেছে। এ কম মার্জিনে প্রশাসনিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর মুনাফা করা খুবই দুরুহ বলে মনে করছে খোদ কোম্পানির দায়িত্বশীল অনেকে।
উল্লেখ,চলতি বছর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দুই দফায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।প্রথম দফায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়।বিদ্যুত কেনা বাবদ ডেসকোর ব্যয় বেড়ে যায় ১১ শতাংশ।দ্বিতীয় দফায় বাড়তি মূল্য কার্যকর হয় চলতি বছরের আগস্টে।এ দফায় দাম সাড়ে ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়।
খুচরা পর্যায়ে দাম না বাড়িয়ে শুধু পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো যে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে তা বিবেচনায় নেয়নি বিইআরসি।তাদের এ একচোখা সিদ্ধান্তে শুধু কোম্পানিটি নয়,ক্ষতির মুখে এ কোম্পানির হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার। প্রতি বছরই তাদের প্রাপ্তির পরিমাণ কমছে।কোম্পানিটি ২০১০ সালেও ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।কিন্তু পরের দুই বছরে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৩৫ ও ২৫ শতাংশ।