সুচিত্রার পৈত্রিক বাড়ি দখলমুক্ত

  • Emad Buppy
  • July 16, 2014
  • Comments Off on সুচিত্রার পৈত্রিক বাড়ি দখলমুক্ত
suchitra

কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈতৃক বাড়িটি ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের কাছ থেকে দখলমুক্ত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মালামাল সরিয়ে নিলে বুধবার সকালে বাড়িটিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

suchitra sen's Father's House
সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে দীর্ঘদিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট। ফাইল ছবি

জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের দখলে ছিল বাড়িটি। প্রাথমিকভাবে বাড়িটিতে তালা ঝুলিয়ে আমরা দখলে নিয়েছি। বৃহস্পতিবার বাড়িটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি। সেখানে তিনি বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রার বিয়ে হয়। এরপর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি।

সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি অবসরে যান। ১৯৬০ সালে বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে কলকাতায় চলে যান করুণাময় দাশগুপ্ত। সে সময় থেকে বাড়িটিকে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়।

১৯৮৭ সালে জামায়াত নেতাদের তদবিরে তত্কালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দুর রহমান বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন। এই ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং জেলা জামায়াতের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাম দুলাল ভৌমিক জানান, বাড়িটি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট নানা কৌশল অবলম্বন করে। ১৯৮৭ সালে বার্ষিক ইজারা নেওয়ার পর ১৯৯১ সালের ১৮ জুন বাড়িটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেওয়ার আবেদন করে ট্রাস্ট। ভূমি মন্ত্রণালয় স্থায়ী বন্দোবস্ত না দিয়ে বাড়িটি আবারও বার্ষিক ইজারা দেয়। ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় ইজারা বাতিল করে। বকেয়া পরিশোধ করে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট ইজারা নবায়ন করা হয়। এরপর থেকে বাড়িটি তাদের দখলে ছিল।

বাড়িটির পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা আইনজীবী শফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী অনেক সুন্দর ছিল। ছাদসহ একটি একতলা ভবন, পামগাছ, করবী, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুলে সাজানো ছিল এর চারপাশ। কিন্তু ইজারা গ্রহণকারীরা এসব স্মৃতি রাখেননি। তারা ইজারার শর্ত ভেঙেছেন। ভবনের ছাদ ভেঙে টিন লাগিয়েছেন। মূল্যবান সব গাছ কেটে ফেলেছেন।

পাবনাবাসী বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়িটির ইজারা বাতিল করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে দখল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জামায়াত নেতারা দখল না ছেড়ে উচ্চ আদালতে যান। আদালত তাদের পক্ষে স্থিতাবস্থা দেন।

বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রিট করেন আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ। এটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। এরপর দখলকারীরা লিভ টু আপিল করেন। গত ৪ মে লিভ টু আপিল বাতিল করে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। বুধবার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটিতে হাজির হয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এম. সাইদুল হক বলেন, মৌলবাদী জামায়াতচক্রের কাছ থেকে বাড়িটি দখলমুক্ত করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছি। এটি দখলমুক্ত হওয়ায় পাবনাবাসীর মনে স্বস্তি এসেছে।

জেলা জামায়াতের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের সেক্রেটারি আবিদ হাসান বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছি।