
প্রতিটি জেলায় একটি আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার মহাখালী, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বরিশালে আইসিটি ভিলেজ স্থাপন করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ও আইটির বিভিন্ন সেবা রপ্তানি করে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে বলেও জানান তিনি।

রোববার সকালে সচিবালয়ে ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, আউটসোর্সিংয়ের আয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং ও ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ এবং সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সেবা গ্রহণ করছে।
আউটসোর্সিংয়ে নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত বিএনপির সরকারের কারণে মহীসোপানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারা (বিগত বিএনপি সরকার) সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে মহীসোপানে আমাদের অধিকার সুনির্দিষ্ট হয়ে যেত। সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনেক এগিয়েছি। আমাদের আশা ছিল, পরবর্তীতে যে ক্ষমতায় আসবে তারা ওই কাজ এগিয়ে নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, তারা (বিগত বিএনপি সরকার) কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যে কোনো কিছুর একটা সময় থাকে। সে সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি বলে আমরা পিছিয়ে গেছি। আসলে তাদের এ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনাই ছিল না।
সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কাজটা অত সহজ ছিল না। আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২১ বছর তারা ক্ষমতায় ছিল। দুইটা মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতায় ছিল। তারা কেউ কিন্তু এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এ বিষয়টি নজরে আনি। কেবিনেটে বিষয়টি রেটিফাই করি, জাতিসংঘে অনুস্বাক্ষরের ব্যবস্থা করি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। মনে রাখবেন, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। সাত মাস চলছে। বাকি আছে চার বছর পাঁচ মাস। এ সময়ের মধ্যে আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে। সততা, কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। কিন্তু তার আগেই আমরা এটা করতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, আগে গ্রামের মানুষ ভাত-কাপড় চাইত। এখন তারা বিদ্যুৎ চায়। এখন তাদের প্রশ্ন, ইন্টারনেটের গতি কম কেন?
মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আর্থিকভাবে সফলতার মুখ দেখছে। মানুষের সঞ্চয় বাড়ছে। এখন আর সুদের জন্য ঘরের চাল টেনে নিচ্ছে না কেউ। কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে; কেউ থাকলে তাদের খুঁজে বের করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, সচিব আবু বকর সিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।