

‘পা ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রতিবেশীর মেয়ে তামান্নাকে (১০) ২০ থেকে ২৫ দিন আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওর বাবা খুবই গরীব। হাসপাতালে থাকা ও ওষুধ কেনার পর্যন্ত সামর্থ্য নেই। বিভিন্ন লোকজনের সহায়তা নিয়ে ওর সবকিছু চলছে। সোমবার অপারেশনের তারিখ ছিলো। কিন্তু ডাক্তাদের ধর্মঘটে তা হয়নি। এখন আমরা কি করবো বুঝতে পারছি না।’ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষোভের কথা এভাবেই বলেছিলেন নগরীর নিরালা রোডের বাসিন্দা আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর ও ইন্টার্নী চিকিৎসক অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকদের ধর্মঘট মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে খুলনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের পর এ কর্মবিরতি সোমবার ও মঙ্গলবার সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ফলে জরুরী বিভাগ ছাড়া এসব হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), খুলনা প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনার এসোসিয়েশন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে।
এছাড়া খুলনার চিকিৎসকদের ধর্মঘটের পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে বিভাগের ১০জেলায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র কর্তৃক নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর ও চিকিৎসক তানভির ইসলাম বাপ্পাকে অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকরা এ ধর্মঘট পালন করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিকিৎসকদের অব্যাহত ধর্মঘটে ভেঙ্গে পড়েছে খুলনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কেবল নামমাত্র জরুরী বিভাগ ছাড়া এসব হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। অনেক মুমূর্ষু রোগী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ধর্মঘট প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্ট সকলকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করারও দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও সাধারণ মানুষ।
বিশেষ একটি অপারেশনের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অরুণ কুমার তার স্বজনকে নিয়ে এসেছেন। টানা ধর্মঘটের ফলে তিনি সে অপারেশন করাতে পারছেন না। ফলে রোগী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তিনি চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা: শেখ বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা ও চিকিৎসক অপহরণকারীদের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের পাশাপাশি খুলনার সকল সরকারি হাসাপাতালেও লাগাতার ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র অমিত রায় গত ২ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তাকে মহানগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অমিতের চিকিৎসার অবহেলা হয়েছে এমন অভিযোগ করেন তারা। তারা দাবি করেন বিকেল সাড়ে ৫টায় ভর্তি করা হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তিন ঘন্টা বিলম্বে অমিতকে দেখেন। ওই হাসপাতালে অমিতের যথাযথ চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। এছাড়া রোগীর লোকদেরকে অবস্থা স¤পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি। তাছাড়া কর্তব্যরত নার্স ও কর্মচারীরা রোগীর নিকটজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এর প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর চড়াও হয়।
তারা দাবি করে বলেন, আমরা হাসপাতালে ভাংচুর, হামলা কিংবা ডাক্তার অপহরণ করিনি। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।