
আগামি অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখার দাবি জানিয়েছে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিকস রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সেই সাথে অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে বিনিয়োগের সুযোগ, কর আদায়ে এনবিআরকে আরও শক্তিশালী হওয়াসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সংগঠনটি। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। ইআরএফ নেতৃবৃন্দ ও এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য-কর্মকর্তারা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাজেটে স্থানীয় বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধার প্রস্তাব করে ইআরএফ এর সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ না থাকার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ একেবারে কমে গেছে। কর পেতে হলে বাজেটে স্থানীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। পিপিপি নিয়ে বাজেটে বরাদ্দ শুধু এনবিআর এর এসআরও মধ্যে ঝুলে আছে বলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। এটা যেন এসআরও মধ্যে ঝুলে না থেকে দৃশ্যমান হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার দরকার।
কর বৈষম্য দূর করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব করদাতার কর সনাক্তকরণ নাম্বার নেই তাদের ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। অন্যদিকে যাদের সনাক্তকরণ নাম্বার আছে তাদের ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। করের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য দূর করার প্রস্তাব করেন তিনি।
ইআরএফের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে কাঁচামাল থেকে শুরু করে সব পণ্য আমদানি কমে গেছে। একই সাথে শিল্পায়ন বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ি ও সুশীল সমাজ বলছে আগামি বাজেট হবে চ্যালেঞ্জিং বাজেট।
আগামি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সক্ষম ব্যক্তি শ্রেণীর কর হার বাড়ানো, বাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ইআরএফের সাবেক সভাপতি খাজা মাঈন উদ্দিন বলেন, ফাস্টফুড, মিষ্টি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে বাণিজ্যে বিশাল কর ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, পলিসি দূর্বলতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। নজর দেওয়া গেলে করের আওতা বাড়ানোর দরকার হবে না।
আলোচনায় ইআরএফ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু কাওসার বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ আইনি জটিলতার কারণে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব অর্থ পাচার রোধে আইন শিথিলতা প্রয়োজন। মাত্র ২ শতাংশ জরিমানা ও সহজ শর্তারোপ করলে এসব অর্থ দেশে বিনিয়োগ হত।
বাজেটে করনেট বাড়ানোর চেয়ে যারা কর ফাঁকি দেয় তাদের কাছ থেকে পুরোপুরি কর আদায় করা গেলে বাজেট ঘাটতি অনেকটা কমবে বলে মনে করছেন আবু কাওসার।
এছাড়া তিনি বাজেটে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে আয়কর আদায়, বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর বসানো, সক্ষম ব্যক্তির করের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
ইআরএফের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে কর ফাঁকি বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এসব ফাঁকি বন্ধ করা গেলে করের আওতা না বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি যে সব শিল্প প্রণোদনা পাওয়ার পরেও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে না, সে সব খাতে প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।