
রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত বাকি ৩ হাজার ৫৯ শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকাশের মাধ্যমে শ্রমিকদের এই টাকা প্রদান করা হবে। এর আগে নিউ ওয়েব বটমসের ৫৮০ শ্রমিককে এই সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব রায় রমেশ চন্দ্র।
তিনি মঙ্গলবার সকালে অর্থসূচককে জানান, ‘রানা প্লাজা ভোলেন্টারি কম্পেন্সেশন ট্রাস্ট’ থেকে এই অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্কের মাধ্যমে নিউ ওয়েব বটম লিমিটেড নামে কারখানাটির ৫৮০ জন শ্রমিককে এই সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
আর আজ বাকি ৩ হাজার ৩৯ জনকে এই সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সহায়তার এই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারের নিকট পৌঁছানো হবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, শ্রমমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে এই অর্থ বিকাশের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারের নিকট পাঠানো হবে। শ্রম ও কর্মমংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। আজ বিকেল ৩টায় এই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইন্ডাস্ট্রি অলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের গঠিত তহবিল থেকে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়। এই পর্যন্ত তহবিলে ১৬ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। তহবিলে ৪০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। রানা প্লাজা থেকে পোশাক কেনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিলে সহায়তার কথা আগে বলা হয়েছে। তারা আগেভাগে এই তহবিলে সহায়তা করবে বলেও কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণের জন্য ৪ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে জানায় ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল ইউনিয়ন। যার সমুদয় অর্থ রানা প্লাজার কর্মীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
হোটেল লা ভিঞ্চিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংগঠনটির মহাসচিব ইওর্কি রায়না বলেছিলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় এই খাতকে আরও বেশি আলোচিত করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে অন্যান্য প্রতষ্ঠান ও তাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। আর গত ডিসেস্বর মাসে ৪ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন স্বাক্ষরিত হয় বলে জানান তিনি।
আর রানা প্লাজার ক্রেতারা তাদের কমিটমেন্ট অনুযায়ী জরুরিভাবে তহবিলে অর্থ জমা দেবেন বলে জানান তিনি। যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানা থেকে প্রাইমার্কসহ ওয়ালমার্ট, টেক্সম্যান, পিডব্লিউটি গ্রুপ, এনকেডি, ম্যাংগো, জেসিপেনি, গোল্ডেনপি ফেনিং, এলপিপি, ইসেনজা, কেয়ারফোর, সিঅ্যান্ডএ, ক্যাটোকোপ, চিল্ড্রেন প্লেস, বেনিটোন, আদিয়ার, আউচান, ড্রেসহার্ন, মেনিফাটুরা করোনা, প্রিমিয়ার ক্লোথিং, কিডস্ ফ্যাশন, স্টোর-২১, মাস্কট, মাটালান, এল কোর্টে ইনগিস, কিক, লবলো, বন মারচে, ক্যামিউ এর মতো মোট ২৯ কোম্পানি পোশাক কিনতো।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের অবস্থিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১২৯ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় আহত হয় আরও ২ হজার ৫০০ মানুষ। নিহত ও আহতদের অধিকাংশই রানা প্লাজায় বিভিন্ন পোশাক উৎপাদক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
তবে ওই ভয়াবহ ঘটনাটির প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ও প্রতিশ্রুত সহায়তা। মানবেতর জীবন যাপন করছে এই অসহায় আহত ও স্বজন হারানো শ্রমিক পরিবার। আহত অনেকের এখনও চিকিৎসার প্রয়োজন।
এক হিসাবে দেখা যায় গত একদশকে বাংলাদেশে পোশাক কারখানা ধস, কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনায় প্রায় ১৮ শ শ্রমিক নিহত হয়েছে। অথচ ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।