ফরিদপুরের গ্রাম-গঞ্জে বৈশাখী মেলা

বৈশাখী মেলা

বৈশাখী মেলাফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে গ্রামীণ মেলা। বৈশাখ মাস জুড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মেলা বসানোর এ রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরে। গ্রামীণ মেলা সামাজিকভাবে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে নানা শ্রেণি-পেশার ও ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে।

শহরের নারী ও শিশুদের বিনোদন উপভোগের নানা ব্যবস্থা থাকলেও গ্রাম-গঞ্জে বসবাসকারী নারী ও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বাংলা বছরের শুরুতে বৈশাখ মাস জুড়ে গ্রামে গ্রামে বা পাড়ায় মহল্লায় আয়োজিত বৈশাখী মেলাতেই এ সকল গ্রামীণ নারী ও শিশু কিশোরদের সরোব উপস্থিতি থাকে। এছাড়া মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনেরা বেড়াতে আসায় প্রতি ঘরই থাকে উৎসবমূখর। এসব মেলায় সার্কাস, পুতুলনাচ, যাদু প্রদর্শনী, বিচারগান, বাউলগানের আসর বসিয়ে আবহমানকাল থেকে চলে আসা সংস্কৃতির উপস্থাপনার মাধ্যমে জমিয়ে তোলা হয় মেলাকে।

গ্রামীণ মেলায় গৃহবধু, শিশু, কিশোর, কিশোরীরা নিজের মত করে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে থাকে। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইচ্ছা করলেই গ্রামীণ নারীরা কোথাও যেতে পারেন না, তাই মেলাকেই তারা বিনোদনের একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে ধরে নেয়। মেলায় ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে কেনাকাটা করে আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয় গ্রামীণ মানুষেরা। মেলায় সাধারণত মাটি, বাঁশ ও বেতের তৈরি খেলনা সামগ্রী কেনা বেচা বেশী হয়ে থাকে। পাশাপাশি মেলা জুড়ে থাকে নানা পণ্যের সমাহার। মেলায় আসা কিশোরদের মধ্যে বাহারি বাঁশি কেনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে। তাই বাঁশিসহ কিছু খেলনা পণ্য থাকে যা শুধুমাত্র মেলায় বিক্রির উদ্ধেশ্যেই তৈরি করা হয়।

গানের শিল্পী মো. লুৎফর রহমান বয়াতি বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে ব্যস্ততা বেশী থাকে। তিনি বলেন, বৈশাখ মাসে গ্রামে গ্রামে মেলার আয়োজন করায় মেলাকে সার্থক করতে মানুষ কবি ও বিচার গানের আয়োজন করে।

মধুখালী বৈশাখী মেলার আয়োজক মির্জা মনিরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বাউলগান, বিচারগানসহ দেশীয় সাংস্কৃতির আয়োজনের মাধ্যমে যুব সমাজের সামনে দেশীয় সংকৃতিকে তুলে ধরে তাদের মধ্যে দেশাত্ববোধকে জাগ্রত করা মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া মেলার মাধ্যমে নানা ধর্মের ও পেশার মানুষের সম্মিলন হওয়ায় মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় চলছে সপ্তাহ ব্যাপী বৈশাখী মেলা। এছাড়া বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, নগরকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এরই মধ্যে শতাধিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলার মাধ্যমে বাঙ্গালীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে সহজেই তরুণ সমাজের সামনে তুলে ধরা যায়। যা থেকে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হতে পারে। তাই গ্রামীণ মেলাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার দাবি সচেতন মানুষের।

এমআইটি/সাকি