
১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফরিদপুর শহরে প্রবেশ করে। শহরে প্রবেশ কালে গোয়ালচামট এলাকায় জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রমে কীর্তনরত আটসাধুকে গুলি করে হত্যা করে তারা। পরে নয় মাস ধরে পাক-হানাদারেরা জেলা জুড়ে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও লুন্ঠন চালায়।
সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। গোয়ালচামটে অবস্তিত জগদ্ববন্ধু সুন্দরের আশ্রম শ্রীঅঙ্গণে প্রার্থনায় কীর্তনরত ছিলেন ধর্মপ্রাণেরা। এমনি এক মূহুর্তে পাকসেনারা শহরে প্রবেশকালে শ্রীঅঙ্গণে ডুকে পড়ে এবং কীর্তনরত আটসাধুকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহত এই আট সাধু হলেন নিদেনবন্ধু, ক্ষিতিবন্ধু বক্ষ্মচারী, গৌরবন্ধু বক্ষ্মচারী, চিরবক্ষ্মচারী এবং রবিবন্ধু বক্ষ্মচারী। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই প্রথম গণহত্যা শুরু করে পাকবাহিনী। এছাড়া ফরিদপুরে নয় মাস ধরে হত্যাযজ্ঞ চালায় হানাদার পাকসেনারা তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস। নয় মাসে হত্যা করা হয় ফরিদপুরে নাম জানা-অজানা অসংখ্য মানুষকে। অনেক মা-বোনকে পাকসেনাদের ক্যাম্পে দিনের পরদিন আটক রেখে করা হয় নির্যাতন। ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুর মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাকবাহিনীর বর্বরতা অব্যাহত ছিল ।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাক-বাহিনী শ্রী অঙ্গণে আট সাধুকে হত্যার মাধ্যমে ফরিদপুরে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ এপ্রিল পাকসেনারা ডিনামাইট দিয়ে আশ্রম ভবনটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে জেলার সর্বত্রই তাদের তাণ্ডব চালায়। সাধুদের হত্যার পর স্থানীয় লোকজন আট সাধুর মরদেহ আঙ্গিনায় চত্বরেই সমাধিস্থ করে। প্রতি বছরের ২১ এপ্রিল শহীদ সাধুদের আত্মার শান্তি কামনার জন্যে আশ্রমে জড়ো হয় মানুষ।
ভক্তদের দাবি, আশ্রম ফরিদপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। শান্তির জন্য মানুষ আশ্রমে আসে। নীরিহ সাধু সন্নাসী হত্যা জাতির জন্য একটি কলংকজনক অধ্যায়। ভক্তদের কাছে আট সাধুকে হত্যার ঘটনাটি বেদনাদায়ক। সেদিনের কথা মনে করে আজো শিউরে ওঠেন সেদিনের ভক্তরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী এই আট সাধুর স্মরণে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়েছিল আশ্রমের সেই চলতা গাছতলায় আটটি পৃথক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর এইদিনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের।
এমআইটি/সাকি