
বাংলা ও বাঙালির স্বকীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সার্বজনীন প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। তাইতো এই দিনটিকে ঘিরে সারাদেশের ন্যায় অনাবিল উৎসব আনন্দে মেতেছে খুলনাবাসী। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
দিনটি উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার সকালে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়া বিকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে টানা ৫ম বারের মতো বাংলালিংকের সৌজন্যে নগর সামাজিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে সকাল থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। আয়োজনের মধ্যে থাকছে- দলীয় সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, শিশু চিত্রাঙ্কন, বাউল সঙ্গীত, লোকজ সঙ্গীত ও নৃত্য, লাঠি খেলা, হাডুডু ইত্যাদি।
বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ বরণ করতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) সকাল ৭.৪৫ মিনিটে ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
পরে সকাল ৮টায় বর্ষবরণ সঙ্গীতানুষ্ঠান ও সকাল ৯টায় নববর্ষের শোভাযাত্রা শিববাড়ী মোড় থেকে ময়লাপোতা হয়ে রয়েল চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় বানরখেলা, লাঠিখেলা, ম্যাজিকশো, নাগরদোলা, পুতুল নাচ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পয়েলা বৈশাখ-১৪২১ “শুভ নববর্ষ” উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ নানাবিধ কর্মসূচি পালন করছে।
সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। বৈশাখী মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের অংশগ্রহণে খাঁটি দেশিয় খড়মাটির কুঠি বানিয়ে দেশিয় ঐতিহ্যের পান্তা-ইলিশ, গ্রাম বাংলার ষড়ঋতুর আকর্ষণীয় বিভিন্ন আয়োজন, দেশীয় পিঠা তৈরি ও প্রদর্শনী ইত্যাদি নানাবিধ বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে সকাল ৯.৩০মিনিটে বর্ষবরণ সংগীতানুষ্ঠান এবং সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পালকী, ঢোল-তবলা, একতারা, দো-তারা, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, গরুর গাড়ি, দেশিয় সংস্কৃতির ছবি সম্বলিত বিভিন্ন প্লাকার্ড, ফেস্টুন, মুখোশসহ আরও অনেক আয়োজনে অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ফুলবাড়ীগেটসহ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে অডিটরিয়ামের সম্মুখে এসে সমাপ্ত হয়েছে।
শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সকাল ১০.৩০মিনিটে অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (বাউল সঙ্গীত), সাপ খেলা, বানর খেলা, ম্যাজিক শো, ট্রেসার হান্ট ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মোরগ লড়াই, কাবাডি খেলা, ঘুড়ি উৎসবসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী দেশি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত থেকে আকর্ষণীয় এসব প্রতিযোগিতা উপভোগ করবেন এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন। সন্ধ্যায় অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স এসোসিয়েশন অনুরূপ নানাবিধ কর্মসূচি পালন করবে।
বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী খুলনা জেলা সংসদ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে।
এছাড়া খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে জাতিসংঘ শিশুপার্কে বসবে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) আয়োজনে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সকালে বর্ষবরণ প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রূপান্তর ও বর্ষবরণ পর্ষদের যৌথ আয়োজনে সকালে ডা.শহীদ মিলন চত্বর (সাত রাস্তার মোড়) থেকে শুরু হয়ে বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা প্রধান কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
আব্বাসউদ্দিন একাডেমী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট দৌলতপুর, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ বিভিন্ন সমাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিবসটি নানা আয়োজনে পালন করছে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলছে জমজমাট হালখাতা উৎসব।
কেএফ