
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে পরকীয়া প্রেমে আটকের ঘটনার জের ধরে দুই গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে গ্রামের সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক এসএসসি পরিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এবং সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিপুলাসার ইউনিয়নের সাইকচাইল ও কাঁচি গ্রামে এ ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় মহিলাসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে শতাধিক লোক। এছাড়া, হামলা চালিয়ে এক গ্রামের প্রায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানে ভাংচুর এবং কয়েকটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় হামলার সাথে লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার রাত ১টার দিকে উপজেলার বিপুলাসার ইউনিয়নের সাইকচাইল গ্রামের ওমান প্রবাসী জামাল উদ্দিনের স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী জেসমিন বেগমের সাথে আপওিকর অবস্থায় তার পরকীয়া প্রেমিক পার্শ্ববর্তী পাটিয়ালা গ্রামের আমিন উল্লার ছেলে সেলিম মিয়াকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় ওই পরকীয়া প্রেমিককে পরদিন রোববার পর্যন্ত আটক করে রাখে এলাকাবাসী।
ওইদিন বিকেলে উপজেলার কাঁচি গ্রামের লোকজন আটক ওই পরকীয়া প্রেমিককে দেখতে সাইকচাইল গ্রামে যায়। এ সময় দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি সংঘর্ষে রুপ নেয়। এ সময় সাইকচাইল গ্রামের লোকজন কাঁচি গ্রামের লোকদের উপর বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং তাদের উপর গুলি ছুঁড়তে থাকে।
এতে চলতি বছরের এক এসএসসি পরিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, কাঁচি গ্রামের আবুল কালাম, পারভেজ হোসেন, ইয়াসিন মিয়াসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় ওই এসএসসি পরিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ওই ছাত্রের পেট থেকে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ওই সময়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। খবর পেয়ে রাতে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার জের ধরে সোমবার ভোর থেকেই দুই গ্রামের সীমান্ত এলাকায় উভয় পক্ষের লোকজন অবস্থান নিতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে সাইকচাইল গ্রামের লোকেরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কাঁচি গ্রামবাসীর ওপর ফের হামলা করে।
বেলা ১১টার দিকে সাইকচাইল গ্রামের অন্তত ৪/৫ হাজার লোক মিলে কাঁচি পুরো গ্রামে হামলা করে। এ সময়ে তারা কাঁচি গ্রামের প্রায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িঘর ও দোকান ভাংচুর এবং লুটপাট করে। আগ্নিসংযোগ করা হয় অন্তত ৫টি দোকান ও বাড়িতে। এ সময় একের পর এক গুলির শব্দ শোনা গেছে। রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোঁপানো হয়েছে গ্রামের সকল শ্রেণির লোককে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ৫০/৬০ জন। আহতদের মধ্যে আবদুল মান্নান, মাস্টার সোহেল, জামাল, আলমগীর হোসেন, হিরন, বাবু, মাইন, রাব্বি, সহিদের নাম জানা গেছে। বাকীদের নাম তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি।
এ ঘটনায় গুরতর আহতদের লাকসাম, কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি গবাদি পশু ও রাস্তার গাছও। তারা কয়েকটি গবাদি পশু (গরু) কে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে এবং কেটে ফেলেছে প্রায় ৩০টি রাস্তার গাছ। সংর্ঘষ চলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে সাইকচাইল গ্রামের লোকেরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে।
এছাড়া, ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা করে তারা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত আইন-শৃংখলা বাহীনির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, ঘটনার শুরুর পর থেকেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।