
বিয়ের পরে হানিমুনে কিংবা অ্যানিভার্সারিতে বিদেশে যেতে চায় এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। প্রিয় মানুষটির সাথে একান্তে কয়েকটি দিন কাটাতে দূরে কোথাও চলে যাওয়া এক অন্যরকম অনুভূতির ব্যাপার।
কিন্তু বিদেশে কেন? দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’। এই বর্ষায় যারা বেড়াতে যাওয়ার জন্য বিদেশে যেতে চান তারা কি কখনও বান্দরবানের নীলাচলে গিয়েছেন? নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে এখনো যাদের যাওয়ার সুযোগ হয়নি তারা আর দেরি না করে ঘুরে আসতে পারেন। ভ্রমণপিয়াসী কেউ যদি সেখানে দৃষ্টি দেন তাহলে আপনি হারিয়ে যাবেন সবুজের সেই লীলাভূমিতে।
পাহাড় আর সবুজে ঘেরা বান্দরবান সব ঋতুতেই সুন্দর। তবে বান্দরবানকে একটু ভিন্নভাবে চেনা যায় ভরা বর্ষায়। বর্ষায় বান্দরবান তার রূপ রহস্যের ঘোমটা খুলে মেলে ধরে ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে। বর্ষায় বান্দরবান বেড়ানোর আরেকটা দিক হলো এ সময় প্রায় সব ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যটকদের ভিড় কম থাকে।
বান্দরবানের নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্সের অবস্থান বান্দরবান শহরে প্রবেশের ৪ কিলোমিটার আগে প্রধান সড়কের ডান পার্শ্বে একটু ভেতরে। নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্সের পরই সবার পরিচিত মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের অবস্থান। নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি এ বান্দরবানের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মো. আলাউদ্দিন উদ্বোধন করেন। একই চত্বরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ শুভ্রনীলা নামে আরেকটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে। উভয় কমপ্লেক্সের মাঝে খোলা জায়গায় বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
মূল সড়ক থেকে নীলাচলে যাওয়ার উঁচুনিচু রাস্তাটি মনে বেশ ভয়ের উদ্রেক করতে পারে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে নীলাচলে যাওয়ার সময় পাশে অনেক নিঁচুতে পাহাড়িদের ঘর চোখে পড়বে।
পাহাড়ি পথে খেয়াল রাখতে হবে যেন পিছলে না যান। এজন্য পাহাড়ে চলার উপযোগী জুতো পড়া থাকলে সুবিধে হবে।
নীলাচলের চূড়া ভূমি সমতল থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতায়। ঠাণ্ডা বাতাসের পরশে মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠবে যখন তখন।
নীলাচল থেকে দেখতে পাবেন পাহাড়ের নিচে এবং চূড়ায় আপনার গা ছুঁয়ে মেঘ ভেসে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘের স্পর্শে শরীর মন সব ভিজে একাকার হয়ে যাবে। প্রকৃতির অকৃত্রিম এমন স্পর্শে ভাল লাগাগুলো স্মৃতির মনিকোটায তুলে রাখতে চাইবেন।
ভরা বর্ষায় নীলাচল যুবতী হয়। বর্ষায় নীলাচল ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। চারপাশে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মিছিল। কখনও মাথায় উপরে মেঘের নৃত্য কখনও বা রোদ-ছায়ায় সূর্যের লুকোচুরি। ঝুপ করে আকাশ ভেঙে নেমে আসা ঝমাঝম বৃষ্টি দেখে মন চলে যায় অন্য পৃথিবীতে। মেঘ পাহাড়ের রাজ্যে এসে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হতে হয় সবাইকে।
নীলাচলের পূর্বের পাহাড়গুলো অনেক উঁচু। বর্ষায় সেদিকে মেঘের আনাগোনা বেশি থাকে। পশ্চিমের পাহাড়গুলো বিকেলের সোনা রোদে চকচক করে। অনেকটা এভারেস্টের মত দেখাবে। পশ্চিমের ছোট পাহাড়গুলো সহজে নজর কাড়ে। পাহাড়ের চূড়া দেখা গেলেও নিচটা দেখা যায়না। সবুজ গাছের ভিড়ে কেমন যেন অন্ধকার, কোথাও আবার ফাঁকা।
এছাড়া বর্ষায় দেখা মিলবে রংধনুর! রংধনুর দিগন্ত বিস্তৃত অবয়ব কী নিখুঁত। অর্ধবৃত্তাকারে তা পূর্ব থেকে দক্ষিণে চলে যায়, পাহাড়ের আড়ালে। তখন মনে হবে দেশে নয় দার্জিলিং-এ রয়েছেন। তাহলে কেন নিজের এমন স্বর্গ না দেখে বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবেন?
পাহাড়ে জোৎস্না রাত না দেখলে বুঝতেই পারবেন না জোৎস্না কতটা রহস্যময়। চুপিচুপি জোছনা রাত নেমে এলে দেখবেন জোৎস্না এসে পড়ে রবে নীলাচলের আচলে। গুনগুনিয়ে গেয়েও উঠতে পারেন ‘আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’। তাই বর্ষায় নীলাচলে যাওয়ার সময় পূর্ণিমার দিনক্ষণও দেখে নিতে পারেন।
এই বর্ষাতেই একবার ঘুরে আসুন না নীলাচল। পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দরবানের সবুজ পাহাড়, রোদ-মেঘ আর বৃষ্টির মিতালী দেখতে দেখতে শহুরে মনটা অটোমেটিক রিচার্জ হয়ে যাবে।
কিভাবে যাবেন নীলাচল?
ঢাকা থেকে যে কেউ ট্রেনে বা বাসে সরাসরি চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বান্দরবান যেতে পারেন।
ঢাকা থেকে বান্দরবান সরাসরি যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে বান্দরবান পযর্ন্ত সরাসরি নন এসি ভাড়া জনপ্রতি ৬২০টাকা, এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস ছাড়ে ফকিরাপুল/কমলাপুর রেল ষ্টেশনের পাশের কাউন্টার থেকে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম : ট্রেনে এসি সিট ৭৩০ টাকা, এসি বার্থ ১০৯০ টাকা। নন এসি সুলভ ১৬০ টাকা, শোভন ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা, ১ম সিট ৪২৫ টাকা, ১ম বার্থ ৬৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৬১০ টাকা
বাস: এসি ৭০০-১২০০ টাকা। নন এসি ৩০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম থেকে নীলাচল যেতে পারেন :
বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বানী নামক দুটি সরাসরি নন এসি বাস আছে। এগুলো ৩০ মিনিট পর পর বান্দরবানের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কি. মি. দূরে নীলাচল ও শুভ্রনীলা পর্যটন কেনদ্র। বান্দরবান শহরের বাস স্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড ক্রু জার, ল্যান্ড রোভার ভাড়া নিয়ে যেতে হবে অথবা বান্দরবান শহরের সাঙ্গু ব্রীজের কাছে টেক্সি স্টেশন থেকে টেক্সি ভাড়া নিতে ও নীলাচল ও শুভ্রনীলায় যেতে পারেন । জীপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার ৫০০-৭০০/-, টেক্সি ২৫০-৩০০/- পর্যন্ত নিয়ে থাকে ।