
বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নকে সহজতর করতে নতুন কৌশল প্রস্তাব করলো তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নের পক্ষে। আর এজন্য বিদেশি ক্রেতাদের ওপর সরকারি ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে জানালেন সংগঠনটির দ্বিতীয় সহ সভাপতি এসএম মান্নান কচি।
শুক্রবার বিকেলে সংগঠনটির নূরুল কাদের মিলনায়তনে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য পোশাক কারখানার কর্মকতাদের নিয়ে এক প্রস্তুতি সভায় তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন পোশাক শিল্পকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কম্প্লায়েন্স ইস্যুতে পরিদর্শনের নামে কথায় কথায় কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরে ৫০টি পোশাক কারখানাও থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি। আর তাই খাতটির শ্রমিকদের সুযোগসুবিধা বাড়াতে সরকারিভাবে পোশাকের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে তারা।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর থেকে পোশাক কর্মীদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। নানা কারণ দেখিয়ে এখনও বেশির ভাগ কারখানাই মানছে না নতুন বেতন কাঠামো।
এর আগে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, পোশাক শিল্পের দু:সময়ে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাতিল হয়েছে কোটির টাকার রপ্তানি আদেশ। এই অবস্থায় যেখানে শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দেওয়া কষ্টের সেখানে নতুন কাঠামো মানাটা অনেক কারখানার জন্য অসম্ভব।
এছাড়া নতুন বেতন কাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা না বাড়াকেও মজুরি বাস্তবায়নের অন্তরায় বলে মনে করেন অনেক মালিক।
তাছাড়া বিদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে পোশাক পণ্যের কাঁচামাল আমদানি ও প্রস্তুত ব্যয় বৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন তারা।
এই অবস্থায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের মাধ্যমে ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ানোর চিন্তা করছে বিজিএমইএ।
বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে মন্ত্রী মালিকদের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান কচি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের পোশাকখাত এগিয়ে যাক বিদেশি ক্রেতারা কোনো ভাবেই চায় না।
রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় প্রাইমার্ক ছাড়া অন্যরা এগিয়ে আসেনি উল্লেখ করে কচি বলেন, এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও তাদের সহায়তা দানের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তারা আসলে আমাদের পোশাক খাতের উন্নয়ন চায় না।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানা থেকে প্রাইমার্কসহ ওয়ালমার্ট, টেক্সম্যান, পিডব্লিউটি গ্রুপ, এনকেডি, ম্যাংগো, জেসিপেনি, গোল্ডেনপি ফেনিং, এলপিপি, ইসেনজা, কেয়ারফোর, সিঅ্যান্ডএ, ক্যাটোকোপ, চিল্ড্রেন প্লেস, বেনিটোন, আদিয়ার, আউচান, ড্রেসহার্ন, মেনিফাটুরা করোনা, প্রিমিয়ার ক্লোথিং, কিডস্ ফ্যাশন, স্টোর-২১, মাস্কট, মাটালান, এল কোর্টে ইনগিস, কিক, লবলো, বন মারচে, ক্যামিউ এর মতো মোট ২৯ কোম্পানি পোশাক কিনতো। তবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ক্ষতিপূরণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বন মারসে, ইআই কোর্টি ইঙ্গল, লোবলো এবং প্রাইমার্কসহ মাত্র সাতটি কোম্পানি তাদের অনুদানের টাকা দেওয়া কথা দিয়েছে।
এদিকে সোনার বাংলা অনুষ্ঠানে ২ লাখ পোশাক কর্মী যোগদান করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, যে কর্মীরা মানসম্মত পোশাক তৈরি করে অতীতে যেমন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর মাধ্যমে দেশকে পরিচিত করেছে আবার তারা গান গেয়ে নতুন করে দেশকে পরিচিত করবে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।