ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড়

Tour_chandronath_1

Tour_chandronath_1বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড। শুধু তাই-ই নয় এই স্থানটি বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণেও অনেকটা এগিয়ে। বিশেষত সীতাকুণ্ডের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেকোনো ভ্রমণকারীকে আপন করে নিতে সক্ষম। আর সে রকম সীতাকুণ্ডের সবচাইতে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হলো চন্দ্রনাথ পাহাড়।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পূর্ব দিকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চন্দ্রনাথ পাহাড়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, নেপালের এক রাজা ঘুমের মধ্যে পৃথিবীর পাঁচ স্থানে শিবমন্দির স্থাপনের আদেশ পান। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে নেপালের সেই রাজা পৃথিবীর পাঁচ স্থানে পাঁচটি শিবমন্দির স্থাপন করেন। এগুলো হলো- নেপালের পশুপতিনাথ, কাশিতে বিশ্বনাথ, পাকিস্তানে ভূতনাথ, মহেশখালীর আদিনাথ এবং সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রাচীন আমলে এখানে মহামুনি ভার্গব বাস করতেন। অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এই স্থানে এসেছিলেন। মহামুণি ভার্গব রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র আগমণ করবেন জেনে তাদের গোসল করার জন্য এখানে তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন। রামচন্দ্রের সাথে তার স্ত্রী সীতাও এখানে এসেছিলেন। রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে গোসল করেছিলেন এবং সেই থেকে এই স্থানের নাম সীতাকুণ্ড।

সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কিভাবে যাবেন : 

সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় রিক্সা করেই যাওয়া যায়। তবে রিক্সায় যাওয়ার চেয়ে পায়ে হেটে গেলে ভ্রমণের আসল মজাটা উপভোগ করা যায়। সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে পথে পড়বে অসংখ্য দর্শনীয় দৃশ্য। রিক্সায় করে গেলে সেই সব সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার সময় পথে হিন্দুদের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা পর্যটকদের চোখে পড়বে। চলতি পথে চোখে পড়বে পেয়ারা, সুপারি, আমসহ আরও বিভিন্ন ধরনের বাগান।

পাহাড়ের ভিতরের দিকে স্থানীয় নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর জনগণ জুম ও ফুলের চাষ করে। স্থানীয় নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী ত্রিপুরা নামে পরিচিত। সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার পথে যে জিনিসটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে সেটি হলো পথিমধ্যে থাকা ছোট ছোট ঝর্নাগুলো। যাওয়ার পথে প্রথম যে ঝর্নাটি পড়বে সেখান থেকেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। যারা সহজ উপায়ে সরাসরি পাহাড়ে উঠতে চান তারা ডানদিকের সিঁড়িওয়ালা রাস্তাটি দিয়ে উপরে উঠতে পারেন এবং যারা পাহাড়ি পথ ডিঙিয়ে রোমাঞ্চের সাথে পাহাড়ে উঠতে চান তারা বামদিকের পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠতে পারেন।

উল্লেখ্য ডানদিকের পথটিতে সিঁড়ি থাকলেও পাহাড়ে উঠার ক্ষেত্রে বামদিকের পাহাড়ি পথটিই সহজ। আর পাহাড় থেকে নিচে নামার সময় ডানদিকের সিঁড়িওইয়ালা পথটিই সহজ।

চন্দ্রনাথ মন্দির ছাড়াও এখানে সীতা মন্দির নামে আরও একটি মন্দির আছে। এই মন্দিরের কাছে মৃতপ্রায় একটি ঝর্না রয়েছে। তবে আপনি যদি ঝর্নার পানিতে গোসল করতে চান তাহলে আপনাকে পাহাড়ের গভীর বনের মধ্যে যেতে হবে। গ্রীষ্মকালে এই পাহাড় রুক্ষ্ম থাকলেও বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত হয়ে পাহাড়ের গাছ, লতা, পাতা সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার সতেজ হয়ে পর্যটকদের মন প্রাণ ভরিয়ে তোলে। উল্লেখ্য বর্ষাকালে পাহাড়ে ওঠার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ সময় পাহাড়ি পথ ব্যবহার না করে সিড়ি পথটিই ব্যবহার করা সুবিধাজনক।

যারা উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন তাদের জন্য সীতাকুণ্ডু চন্দ্রনাথ পাহাড় গবেষণার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি গাছ-গাছালি, লতা-পাতা, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

সারাবছর জুড়েই অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখরিত থাকে। এখানে পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য বিশাল একটি মাঠ রয়েছে। তবে এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির বড়ই অভাব। সেজন্য পর্যটকদের সাথে করে খাবার পানি নিয়ে যেতে হয়।

যাতায়াত ব্যবস্থাঃ

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানসহ সকল পথেই সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুরসহ দেশের যে সকল স্থান থেকে চট্টগ্রামের গাড়ি ছাড়ে সেসব গাড়িতে করে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সকল বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। আর যারা ট্রেনে করে যেতে চান তাদেরকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ‍ঢাকা মেইল ট্রেনে ওঠতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র এই ট্রেনটিই সীতাকুণ্ড স্টেশনে যাত্রী উঠানামা করিয়ে থাকে।

থাকার ব্যবস্থা :

পর্যটকদের থাকার জন্য সীতাকুণ্ডে তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই। পর্যটকরা চাইলে এখানে অবস্থিত মন্দিরগুলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। তবে সবচাইতে ভালো রাতে সীতাকুণ্ড না থেকে চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়া।

একে/এএস