
মূল মার্কেট থেকে বিতাড়িত পদ্মা সিমেন্ট কোম্পানি অবলুপ্তির পথে। তালিকাভুক্তি থেকে শুরু করে অবলুপ্তির প্রক্রিয়া পর্যন্ত প্রতি পর্যায়ে অনিয়ম আর প্রতারণা করেছে কোম্পানিটি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উদাসীনতার সুযোগে এসব অনিয়ম করেও পার পেয়ে গেছে কোম্পানির অসাধু উদ্যোক্তারা। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ডিএসই’র দায়িত্বহীনতায় প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি পদ্মা সিমেন্টের মালিকানা বদল হলেও দীর্ঘদিন সে খবর জানত না ডিএসই কর্তৃপক্ষ। ডিএসইর পক্ষ থেকে ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী ছয় বছরেও এর কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি। ওই চিঠি ইস্যুর ৬ বছর পর ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি তারা এর উত্তর পাঠায়। একটি প্রতিবেদন পাঠাতে এত সময় কেন লাগছে ৬ বছরে তাও জানতে চায়নি তারা। চিঠি পাঠানোর পর তারা এই দীর্ঘ সময় যেন ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।
উল্লেখ, ২০০২ সালে আইপিওতে আসে কোম্পানিটি। তখন এর চেয়ারম্যান ছিলেন আমিনুল ইসলাম। তখন কোম্পানির পরিচালকদের হাতে মোট শেয়ার ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ। এর মধ্যে আমিনুল ইসলামের ২৫ লাখ,নজরুল ইসলামের ২৪ লাখ,মোহাম্মদ আলীর ১৪ লাখ,নাহিদ কাওসারের ১৫ লাখ,মামুন আলী বিশ্বাসের ১২ লাখ,তানভীর নেওয়াজের ৮ লাখ,বিশ্বাস কোল্ড স্টোরেজ ৩০ লাখ এবং নাটোর কোল্ড স্টোরেজের হাতে ১০ লাখ শেয়ার ছিল।
২০১৩ সালে কোম্পানির পাঠানো তালিকা অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো:ফজলুর রহমানের (প্রতিনিধি,সাভার ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারি) ২০ হাজার শেয়ার ছিল।
সাধারণ পরিচালকদের মধ্যে এস এম ইমতিয়াজ খানের হাতে ২০ হাজার ৫০০ শেয়ার, মো: মতিউর রহমান, আল মামুন এবং মশিউর রহমানের প্রত্যেকের হাতে ২০ হাজার শেয়ার রয়েছে। এ তালিকায় কোম্পানির উদ্যাক্তা পরিচালকদের কারো নাম পাওয়া যায় নি।
ওই দুই তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট, ২০১৩ সালের আগেই কোম্পানির মালিকানা বদল হয়েছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে যারা পরিচালক হিসেবে আছেন তারা উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কোম্পানিটি কিনেছেন, না-কি তৃতীয় কোনো পক্ষ কোম্পানিটি কিনেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হয় প্রভাবশালী কোনো মহল কোম্পানিটি কিনেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তারা নিজ পরিচয়ে সামনে না এসে তালিকায় থাকা ব্যাক্তিদের ডামি হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে রাখেন। সম্ভবত তারা ২০১০ সালে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে সটকে পড়েছেন। অস্বাভাবিক চাঙ্গা বাজারের সুযোগে সহজেই তারা এটি করতে পেরেছেন।
জানা গেছে, কখন এই মালিকানা বদল হয়েছে, কিভাবে হয়েছে, উদ্যোক্তাদের শেয়ারের অংশ কিভাবে এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে তার কোনো তথ্য নেই ডিএসইর কাছে। অথচ আগাম ঘোষণা দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রি করার আইনগত সুযোগ নেই। অনুমোদন বহির্ভূত এই শেয়ার যে ব্রাোকারহাউজের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে সেটিও অপরাধ করেছে।
প্রভাবশালী তৃতীয় পক্ষ যুক্ত থাকার কারণেই চিঠির উত্তর না দেওয়া সত্ত্বেও ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। একই কারণে কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই উদ্যাক্তাদের অংশের প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।