শীঘ্রই আসছে ছাত্রদলের নতুন কমিটি

ছাত্রদল

ছাত্রদলবিএনপির ভ্যানগার্ড নামে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সব সমালোচনা ফেরিয়ে শীঘ্রই আসছে দলটির নতুন কমিটি। এ নিয়ে দলের একটি অংশ চাচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলন ফিরিয়ে আনতে তরুণ এবং চলমান শিক্ষার্থীদের কমিটিতে রাখতে। আর একটি অংশ চাচ্ছে নিজেদের আধিপত্য ও ক্ষমতা ধরে রাখতে পুরনো ঐতিহ্যকে ধারণ করে পূর্বের নিয়মে বয়স্কদের কমিটিতে রাখতে।

এ নিয়ে দলটির পেশাজীবী এবং রাজনীতিবীদদের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। পেশাজীবী সম্প্রদায়র মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবী যারা আছেন। আর রাজনীতিবীদরা হলেন দলের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক পর্যায়ে যারা আছেন।

পেশাজীবীদের দাবি দীর্ঘ দিন বয়স্কদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও তাদের দিয়ে আন্দোলনের মাঠে কোন লাভ হয়নি। আন্দোলন সংগ্রামের সময় তাদের পাশে পাওয়া যায়নি। সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবীদের ওপর হামলা এবং হাইকোর্টের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা হামলা এবং প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার করা হলেও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ওই দিন কোন পদক্ষেপ এবং পরবর্তীতেও কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি।

অধিকতর বয়স্ক হওয়ায় ছাত্রদলের অনেক নেতাই বিয়ে করে বউ-সন্তান নিয়ে ঘরে আরাম-আয়েশে থাকে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। তাই বয়স্কদের বাদ দিয়ে যারা তরুণ এবং যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে চাচ্ছেন তারা।

এছাড়া শিক্ষক ও পেশাজীবীদের যুক্তি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রবেশের জন্য যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে সুপারিশ করা হয় তখন ভিসি ছাত্রত্ব নেই, অছাত্র, বয়স্ক ও বিবাহিত বলে ছাত্রদলের প্রবেশের কথা উড়িয়ে দেন। যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে বলে জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী নিজেদের ক্ষমতা-দাপট এবং আধিপত্য ধরে রাখতে বয়স্কদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে চাচ্ছেন। কেননা তরুনদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা থাকবে  না। তরুনদের সাথে তাদের তেমন সখ্যতা নেই। তরুণরা তাদের কথামত চলতে নাও পারে রাজনীতিবীদদের অনেকেই এমন আশঙ্কা করছেন।

তবে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড অসন্তুষ্ট হয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিক্ষকদের পরামর্শেই ছাত্রদল কমিটি গঠন করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতার কারনেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিএনপির গুলশান কার্যালয় ও লন্ডনের কয়েকটি সূত্র।

তারা জানিয়েছেন, রাজপথের আন্দোলনকে চাঙ্গা করেতে বিভিন্ন অংঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রদলকে পূর্ণগঠনের দিকেই এ মুহুর্তে বিশেষ নজর দিচ্ছেন বিএনপির  শীর্ষ এ নেতারা। আর এ ক্ষেত্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্রাধান্য পাবেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে খালেদা জিয়া দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করেছেন। তারা দলটির বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাতে আর ছাত্রদলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে রাজি নন। দলটির ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করতে তাই এবার সর্বশেষ ভরসা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর।

জানা যায়, বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের ওপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না জিয়া পরিবার। টাঙ্গাইল, নরসিংদী সিন্ডিকেটেই গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করে আসলেও মার্চ ফর ডেমোক্রেসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কোন নেতাকেই মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেবল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পেশাজীবীরাই রাজপথে নেমে লাঞ্চিত হয়েছেন।

গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের প্রভাবশালী শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম খালেদা জিয়ার সাথে তার গুলশানের বাসভবনে দেখা করেছেন। এ সময় ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ৬ জন নেতার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত ও হলকমিটির জন্য প্রতি হলে পাঁচজন করে নেতার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত সরবরাহ করেছেন তিনি।

সূত্র জানায় এর আগে খালেদা জিয়ার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ১৬ জন নেতারা জীবণবৃত্তান্ত জমা দেন অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম। তবে খালেদা জিয়ার অনুরোধে এ তালিকা আরও সংকুচিত করে ৬ জনের নাম দেওয়া হয়।

ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের নেতা, সাদা দলের শিক্ষকদের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনটির নেতাদের সাম্প্রতিক আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকার উপর নির্ভর করেই তৈরী করা হয়েছে জমা দেওয়া নেতাদের নামের তালিকা।

জানা যায়, নামের তালিকা যাচাই বাছাই করে গতকাল রাতেই তারেক রহমানের কাছে মেইলযোগে পাঠানো হয়েছে। আর সবকিছু ঠিক থাকলে আগামি মাসের শুরুর দিকেই ঘোষনা আসতে পারে ঢাবি ছাত্রদলের নতুন কমিটির।

এদিকে তারেক রহমানের মনোভাব জানতে পেরে বিএনপির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তারেক রহমানকে কমিটি গঠন থেকে ফেরাতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চেষ্টা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষকদের বিতর্কিত করার।

তবে বিভিন্ন শিক্ষকদের নামে নানা ইস্যুতে বিতর্ক থাকলেও ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাজমেরী এস এ ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই তুলতে পারেনি সিন্ডিকেটগুলো। আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে তাজমেরীর রয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা।

কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তাজমেরী এস এ ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের উপর আস্থা থাকার কারণে দলের চেয়ারপার্সন আমাদের কাছে পরামর্শ ছেয়েছেন। আমরাও অতীতে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন তাদের বিষয়গুলো নেত্রীর কাছে তুলে ধরেছি।

ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়েই গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে দলের চেয়ারপার্সন যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই আমরা মেনে নেব।

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে কমিটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নেতৃত্বে সম্ভাব্য যারা থাকবেন তারা হলেন:

সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর(সমাজকল্যাণ), মেহেদী হাসান (মার্কেটিং), মাইনুল ইসলাম (বাংলা), সাদিউল কবির নীরব (দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা), রওনকুল হাসান শ্রাবন (বাংলা), আবুল বাসার সিদ্দিকী(পালি), নজরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্বজিৎ ভদ্র (সংস্কৃত)।

নতুন কমিটিতে বিভিন্ন হলে যাদের দেখা যেতে পারে-

সলিমুল্লাহ মুসলিম হল: মুজাহিদুর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ওয়াসিম খান মুক্ত (ইসলামের ইতিহাস), সজিব (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), আবু জাফর (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), নাজিম চৌধুরী।

কবি জসিমউদ্দীন হল: নিজামউদ্দিন রিপন (আরবি), সোহেল রানা (শান্তি ও সংঘর্ষ), আসিফ সাদমান(রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আনোয়ার পারভেজ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সালাহউদ্দিন শুভ (দর্শন)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল: করিম প্রধান রনি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আল- ফারহান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), লিটন এ আর খান (দর্শন), শরিফুল ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আরিফুল ইসলাম,

সূর্যসেন হল: রোকনুজ্জামান রোকন (ইতিহাস বিভাগ), আশিকুর রহমান (আইন বিভাগ), নিজামুদ্দীন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), শিমুল (ইসলামের ইতিহাস), তৌফিক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ), খাইরুল ইসলাম (সমাজবিজ্ঞান)।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল: আবু সুফিয়ান মো. ফয়জুর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সাব্বির হোসেন সূর্য (আইইআর), সিকান্দার আলী সুমন (দর্শন), আশিকুর রহমান (হিসাব বিজ্ঞান), নাসির উদ্দিন (বাংলা), নাইমুর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল: রাশেদ ইকবাল (ইতিহাস), শ্যামল মালুম (আরবি), নাদির শাহ (ইসলামিক স্ট্যাডিজ), শফিউল আলম সৌরভ (আরবি), আশরাফুল ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), নয়ন (দর্শন)।

স্যার এ এফ রহমান হল: এস. এম সোহেল রানা সম্রাট, মো. তাজবীর সিরাজী শিশির (ইতিহাস), মো. উজ্জল (পালি অ্যান্ড বুদ্ধিষ্ট স্ট্যাডিজ), গোলাম সারোয়ার সুমন (ব্যবস্থাপনা), বদিউজ্জামান পলাশ (পালি), মো. রেজোয়ানুল হক সাকি (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, মো. সাদ্দাম (সমাজবিজ্ঞান),   হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল: সাব্বির (দর্শন), রাকিব বিশ্বাস, সজল মিয়া (ইংরেজি), সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক, শহিদুল ইমরান, পারভেজ (লোক প্রশাসন), মো. রনি হাসান (দর্শন), মো. লিটন (দর্শন), সাইফুল ইসলাম শাওন (সমাজবিজ্ঞান) ।

জগন্নাথ হল: সজিব মজুমদার (গণিত), হেমন্ত কুমার সাহা (গণিত), সম্রাট মালাকার (ট্যুরিজম), কৃষ্ণ রায় অনাবিল, সঞ্জিব সিংহ জন।

ফজলুল হক মুসলিম হল: রাকিব (পদার্থ বিজ্ঞান), পারভেজ (পরিসংখ্যান), শিবলী (মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ),আবু রায়হান রনী (গণিত), সাদ্দাম হোসেন ।

অমর একুশে হল: ইমরান হোসেন (পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট), আশরাফুল আলম অনিক (গণিত), শাকির আহমেদ, রনি, মঞ্জুরুল রিয়াদ (কম্পিউটার সায়েন্স)।

শহিদুল্লাহ হল: মির্জা গোলাম শাব্র“ (পরিসংখ্যান), রাজিব রহমান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), মো. হাসনাত (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), ইমন (গণিত), মাহমুদ (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), আনোয়ার (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)।

এএইচ/সাকি