বিআরটিসি বাসের ৩২ ফ্যানের মধ্যে ৩১টিই বিকল !

  • Emad Buppy
  • March 19, 2014
  • Comments Off on বিআরটিসি বাসের ৩২ ফ্যানের মধ্যে ৩১টিই বিকল !
BRTC

BRTCচৈত্রের অগ্নি ঝড়া গরম শুরু হলেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) বাসে যাত্রীদের জন্য দেওয়া বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান) অচল হয়ে আছে।  বিআরটিসির বাস সার্ভিস দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সেবামূলক পরিবহন ব্যবস্থা হলেও এ থেকে তেমন কোনো সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬০৮৮ নম্বরের একটি বিআরটিসির দোতলা বাসে উঠে দেখা যায় নিচ তলার চৌদ্দটি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে ১টিও চলছে না। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলার ১৮টি ফ্যানের মধ্যে চলছে মাত্র ১টি ফ্যান। অন্যদিকে ড্রাইভারের ফ্যানটি ঠিকই চলছে। এ বাসের যাত্রীদের জন্য মোট ৩২টি ফ্যানের মধ্য একটি মাত্র ফ্যান চলছে। এছাড়াও বিআরটিসি কোনো কোনো বাসের ফ্যানই নেই। কোনো কোনো বাসের ফ্যানের জায়গায় বড় ঢিস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাসের ফ্যানের এ বেহাল অবস্থা।

এখন চৈত্রের খর তাপে অসহ্য গরমে মানুষ বিতৃষ্ণা হয়ে যায়। আর বাংলাদেশের মানুষের ঘামের টাকায় কেনা এই পরিবহনের যদি এই বেহাল দশা হয় তাহলে  যাত্রীরা কোথায় গিয়ে সেবা পাবে!

বাসের কন্ডাক্টরের কাছে ফ্যানের এ অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন শীতকাল থাকার কারণে ফ্যানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবে কিছু দিনের মধ্যই বাসের সব ফ্যান ঠিক করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাসের ফ্যানগুলো না চলার কারণ হলো- এগুলোর ওয়ারিং নষ্ট হয়ে গেছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ওয়ারিং করে সব ফ্যান চালু করা হবে।

বিআরটিসির ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মাদ নায়েব আলী বলেন, আমাদের গাড়িগুলো চুক্তির মাধ্যমে ড্রাইভাররা চালাচ্ছে। অনেক সময় ড্রাইভাররা গাড়ির সমস্যা হলে গ্যারেজে নিয়ে আসে না। যতবেশি ট্রিপ দিতে পারবে,  ততবেশি তাদের লাভ হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাইভাররা যদি গাড়িগুলো আমাদের গ্যারেজে নিয়ে আসে তাহলে আমরা খুব দ্রুত তাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিব।’

এছাড়াও বিআরটিসি বাসের নানা সমস্যা তো আছেই। এখন বেসরকারি পরিবহনে ভাড়া বাড়াতে কোনো শুক্র-শনি লাগে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে না। বাস মালিকদের ইচ্ছে হলেই ভাড়া বাড়িয়ে দেন। আর ভাড়া বাড়ানোর নানান যুক্তি তো আছেই। আজ গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে, তো কাল ড্রাইভারের বাড়তি বেতন দিতে হবে, পরশু তেলের দাম বেড়েছে, আরেক দিন রাস্তায় জ্যামের কারণে ট্রিপ কম হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এর বোঝা শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে বলির পাঁঠারূপী সাধারণ জনগণের ওপর।

রাজধানীতে ৭টা থেকে বেলা ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত কন্ডাক্টার, ড্রাইভার ও হেলপারদের চলে নিরব ডাকাতি। ওই দুটি সময় রাজধানীবাসীরা অফিস-আদালতে যান এবং বাড়ি ফেরেন। সঙ্গত কারণে ওই সময় গাড়ির সংকট দেখা দেয়।

আর ওই সংকট দেখে বাসের হেলপার, কন্ডাক্টর আর ড্রাইভারের মাথা ঠিক থাকে না। তখন তারা লক্কর-ঝক্কর মার্কা মিরপুর-গাবতলী রুটের লোকাল, ডেমরা-টঙ্গি-চেরাগআলী রুটের লোকাল, যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের লোকাল, মিরপুর-সদরঘাট রুটের সকল লোকাল বাসকে সিটিং সার্ভিস বানিয়ে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা আর ১৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা আদায় করেন বুক ফুলিয়ে। ওই সময়গুলোতে সকল বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে যায়।

রাজধানীতে তখন আর কোনো লোকাল বাসের অস্তিত্ব থাকে না। সেক্ষেত্রে জনগণের টাকায় কেনা বিআরটিসিও কম যায় না। সেও তখন সিটিং সার্ভিস হয়ে যায় আর ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা হিসেবে আদায় করে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে অসহায় অফিসগামী এবং ঘরমুখো মানুষগুলোকে দেড়গুণ-দ্বিগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে-আসতে হয়।

যদিও নগর পরিবহনে সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। তাতে কি। কত কত গরুই তো কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। তাদের এই হিন কাজের জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। আর যদি জবাবদিহি করতেই হয়, তা ওই খেটে খাওয়া সহায়-সম্বলহীন মানুষদের। টাকাওয়ালারা এদেশে বরাবরই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে যান।  আজও আছেন। এদেশের যত আইন, যত জবাবদিহিতা তা ওই নিঃস্ব-বঞ্চিত আর ভুখা-নাঙ্গা মানুষদের জন্য।

প্রকাশ্য বিদালোকে গণপরিবহনে এই চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছে বছরের পর বছর। এ বিষয়ে কারো যেন কিছু করার নেই। যে মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে দেখভাল করার কথা সেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজের কাজ কিছু না করে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে শুধু বড় বড় বলি আওড়াচ্ছে।

যা জনগণের কোনো কাজে আসছে না। অনেকে বলে থাকেন, পরিবহন সেক্টরের এই নৈরাজ্যকর অবস্থার খবর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছে না। কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর চারপাশের চাটার দল ওই খবর চাউর হতে দেয় না। ফলে জনদুর্ভোগ আর জনগণের পকেট কাটার কাহিনী মন্ত্রী মহোদয়ের অগোচরেই রয়ে যায়।

আবার ভুক্তভোগীরা তা মনে করেন না। তাদের ধারণা, যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় সংক্রান্তে যে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছে তা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের গোচরিভূত হয় ঠিকই। তবে তা ব্যালান্স করার জন্য অর্থাৎ কোনো অ্যাকশন যাতে না হয় সেজন্য বাস মালিক সমিতির লোকজন সর্বদা তৎপর থাকেন।

তবে এতকিছুর পরও একটা কথা থেকেই যায়। সেটি হলো- খবরের কাগজে এবং টেলিভিশনের খবরে ফলাও করে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য নিয়ে মাঝে মাঝেই যে এতো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, সে খবর কি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় রাখে না? না কি ভোটের রাজনীতির কাছে সবই ম্লান হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।

এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় গণপরিবহনের যাত্রীরা। আর এদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি আকষর্ণ করেন তারা।

এসএস/এআর