তিন বছর অপেক্ষায়ও মূলধনের অর্ধেক ফেরত আসেনি

ব্যাংক শেয়ার

ব্যাংক শেয়ারপুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ধসের সবচেয়ে বেশি ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগকারীরা। ধসের পর থেকেই তারা লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তিন বছরের অপেক্ষা করেও দুর্ভাগ্যের কবল থেকে মুক্তি মিলেনি। এ সময়ে পাওয়া লভ্যাংশে তাদের কস্টিং (শেয়ারের জন্য প্রকৃত ব্যয়) কিছুটা কমেছে। কিন্তু তাতেও অনেক শেয়ারে মূলধনের ৬০ ভাগ ফেরত আসেনি। আর যারা ব্রোকারহাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন তাদের অবস্থা শোচনীয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের সর্বোচ্চ রেকর্ডের দিনের (৫ ডিসেম্বর, ২০১০) বাজার মূল্যের সঙ্গে শেয়ারের বর্তমান দরের তুলনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এবি ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারের দাম ছিল এক হাজার ৭৮৮ টাকা। তখন এর শেয়ারের অভিহিত মূল্য ছিল ১০০ টাকা। অভিহিত মূল্য ১০ টাকা বিবেচনায় নিলে ৫ ডিসেম্বরে এবি ব্যাংকের শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১৭৮ টাকা। ব্যাংকটি ২০১০ সালের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে, পরের বছর লভ্যাংশ দেয় ২০ শতাংশ বোনাস ও ৫ শতাংশ নগদ। এটি ২০১২ সালের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর বিদায়ী ২০১৩ সালের জন্য ঘোষণা করে ৫ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। সব মিলিয়ে সম্মিলিত বোনাসের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬৬ টি। নগদ লভ্যাংশ ও বোনাসসহ কস্টিং দাঁড়ায় ১০৩ টাকা। বুধবার শেয়ারটির সর্বশেষ দাম দাঁড়ায় ২৭ টাকা। এ হিসেবে লভ্যাংশের পরও এবি ব্যাংকের প্রতি শেয়ারে বিনিয়োগকারীর লোকসান ৭৬ টাকা বা প্রায় ৭৪ শতাংশ।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) শেয়ারের দাম ছিল ১৭৫ টাকা। ব্যাংকটি ২০১০ সালের জন্য ৯৫ শতাংশ এবং ২০১১ সালের জন্য ৬৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ২০১২ সালে দেয় মাত্র ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। সব মিলিয়ে একটি শেয়ার বেড়ে হয় ৩ দশমিক ২১ টি। প্রতি শেয়ারের কস্টিং দাঁড়ায় ৫৪ টাকা।  বুধবার দিন শেষে এই শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা। এ হিসেবে শেয়ার প্রতি লোকসান ৪২ টাকা বা ৭৭ শতাংশ।

ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (এনসিসি) শেয়ারের দাম ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ছিল ৭৭ টাকা। বুধবার ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকটি ২০১০ সালের জন্য ৩২ শতাংশ এবং ২০১১ সালের জন্য  ১০ শতাংশ নগদ ও ১৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ২০১২ সালে দেয় শুধু ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। সব মিলিয়ে একটি শেয়ার বেড়ে হয় ১ দশমিক ৬২ টি। প্রতি শেয়ারের কস্টিং দাঁড়ায় ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা।  বুধবারের সর্বশেষ দর অনুসারে প্রতি শেয়ারে লোকসান ৩৫ টাকা বা ৭৩ শতাংশ।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর শাহজালাল ইসরামী ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) শেয়ারের দাম ছিল ৯০ টাকা। ব্যাংকটি ২০১০ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১১ সালে ২৫ শতাংশ বোনাস এবং ২০১২ সালে  ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। সব মিলিয়ে একটি শেয়ার বেড়ে হয় ১ দশমিক ৯৫ টি। প্রতি শেয়ারের কস্টিং দাঁড়ায় ৪৬ টাকা। বুধবার দিন শেষে এই শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১৫ টাকা। এ হিসেবে শেয়ার প্রতি লোকসান ৩১ টাকা বা ৬৯ শতাংশ।

তিন বছরের ব্যবধানে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৮১ টাকা থেকে ২৯ টাকায় নেমেছে। তিন বছরে ব্যাংকটি মোট লভ্যাংশ দিয়েছে ৫১ শতাংশ। শেয়ারের কস্টিং দাঁড়ায় ১২০ টাকা। বর্তমানে শেয়ারটির বাজার মূল্য ২৯ টাকা। এ হিসেবে ৯১ টাকা বা ৭৬ শতাংশ লোকসান প্রতি শেয়ারে।