
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সব শাখা ভেতরে ও বাইরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) বসানো হচ্ছে। শাখার ভল্টেও (টাকা জমা রাখার বিশেষ জায়গা) থাকবে এ ক্যামেরা। রাতে নাইটভিশন ক্যামেরা নামের ওই সিসি ক্যামেরা স্বল্প আলোতেও তুলনামূলক স্পষ্ট ছবি দেবে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপকুমার দত্ত।
বগুড়ার আদমদীঘি শাখায় সড়ঙ্গ কেটে ভল্ট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভল্টের সার্বিক পরিস্থিতি না জানানোয় জন্য দুইজন মহা-ব্যবস্থাপক ও একজন উপ-মাব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও ভল্টের সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে অবহিত করেনি সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার আদমদিঘী শাখা সংশ্লিষ্টরা। কিশোরগঞ্জ শাখায় সুরঙ্গ কেটে টাকা চুরির ঘটনার পরবর্তী দশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের এ ব্যাংকটি তার সকল শাখাকে ভল্টের সার্বিক অবস্থার তথ্য পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছিল। এ কারনে ইতিমধ্যে প্রধান শাখার একজন মহাব্যবস্থাপকসহ কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক তার ওই চিঠিতে ভল্টের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে বলেছে, কিশোরগঞ্জ ও বগুড়ার আদমদিঘী দু’টি শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ভল্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনায় ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সবগুলো শাখার ভল্টের অভ্যন্তরে এবং ব্যাংক ভবনের ভেতরে ও বাইরে নাইট ভিশন সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভল্টে সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি অ্যালার্ম সিস্টেম চালু থাকবে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে সবগুলো ভল্টে কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণ ও মেঝে ঢালাই করে স্টিল প্লেট সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এওবং তা বাস্তবায়নের পথে। প্রতিটি শাখার নিরাপত্তা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য চীফ সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টিও আমলে নেয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এরই মধ্যে ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব শাখায় সতর্কতামূলক চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও সব শাখার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যেই ৬১টি টিম গঠন করা হয়েছে। ৬১টি প্রিন্সিপাল অফিস ও রিজিওনাল অফিসকে কেন্দ্র করে এসব পরিদর্শন টিম কার্যক্রম শুরু করেছে এবং পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে। কিশোরগঞ্জ ও আদমদীঘি শাখার বিচ্ছিল্পু দুটি ঘটনার পর অন্য যেকোন ধরণের চুরি বা অর্থ লুটের ঘটনা প্রতিরোধে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সবগুলো শাখার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যাংকটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঠানো কারন দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়ার শেষ দিন ছিল আজ (রোববার)। নিয়ম অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক ভল্ট বিষয়ক তার নেওয়া সকল উদ্যোগগুলো জানিয়েছে। একইসঙ্গে কিশোরগঞ্জের ঘটনার পর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে সকল শাখায় ভল্টের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও আদমদিঘি শাখা যে তা দেয় নি তাও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এখানে প্রধান কার্যালয়ের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না বলে জানান তিনি।
এসএই/