কৃষি পণ্যের মূল্য কমিশন গঠনের দাবি

Kormojibi_nariনিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনে কৃষিপণ্যের নায্য ও লাভজনক মূল্য নির্ধারণ, উৎপাদক-ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা এবং মধ্যস্বত্তাভোগীদের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে জাতীয় মূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে কৃষকরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় জন-মূল্য কমিশন, কর্মজীবী নারী, অক্সফাম ও সিএসআরএল এর যৌথ উদ্দোগে আয়োজিত এক সেমিনারে কৃষক ও কৃষি গবেষকরা এ দাবি জানান।

বক্তারা কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নানান প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন।সরকার কৃষকবান্ধব নয় বলেও উল্লেখ করেন তারা।

সেমিনারে প্রতিটি থানা-উপজেলা পর্যায়ে হিমাগার স্থাপন, ইউনিয়ন ভিত্তিক পণ্যের নির্ধারিত মূল্য সম্বলিত অনলাইন বাজার স্থাপন, আলুজাত খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত করতে নতুন কারখানা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মৌসুমের শুরুতে কৃষি পণ্যের মজুদ, ঘাটতি ও উদ্বৃত্ত সম্পর্কে কৃষককে অবহিতকরণ, কৃষি ভর্তুকি সরাসরি কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া, সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দেয়া, উৎপাদন মূল্যের সাথে শ্রম ও জমির মূল্য অন্তর্ভূক্তিকরণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

কৃষি গবেষক জীবনান্দ জয়ন্ত বলেন, “মূলত মধ্যস্বত্তাভোগীদের কারণেই কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়”। জমির মালিকানা ও আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকে কৃষকদের স্তরভিত্তিক ভাগাভাগির কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, “ছোট ও মাঝারি কৃষকরা বড় কৃষকদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়”।

মানিকগঞ্জ থেকে সেমিনারে এসেছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, “ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে খরচ হয় সে অনুযায়ী দাম আমরা তা পাই না। লাভ তো পরের কথা অনেক সময় উৎপাদন খরচও ওঠে না।সরকার একটি কমিশন গঠন করুক যাতে আমরা ন্যায্য মূল্য পাই”।

ধান, আলু, গম, ভুট্টা ইত্যাদি শস্যে ক্রমাগত লোকসান হওয়ার কারণে অনেক কৃষক জমিত তামাক চাষে উৎসাহী হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এক কৃষক।কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও রংপুর অঞ্চলে তামাক চাষের পরিমাণ অনেক বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নরসিংদী থেকে সেমিনারে আসা কৃষক চান মিয়া বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে আমরা বড় বাজারে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করতে পারিনা। এর ফলে প্রতি বছরই ব্যাপক হারে লোকসান হয়। শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা পূরণ ছাড়া কোনো লাভ হয়না। অথচ ব্যাংক ঋণ যথাসময়ে শোধ করতে হয়”।তাই সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি বৃদ্ধি ও সুদমুক্ত ঋণসুবিধার কথা বলেন চান মিয়া্।

একমাত্র গাভী বিক্রি করে আলু চাষ করেছেন অনেকেই। উৎপাদিত ফসলে লাভের পরিবর্তে একমাত্র গাভীও হারিয়েছেন তারা।

তবে এতসব হতাশার মাঝেও সেমিনারের প্রধান অতিথি সরকারের তথ্যমন্ত্রী শোনালেন আশার বানী। খাদ্য নিরাপত্তা অধিকার আইন গঠনে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “মুক্তবাজার অর্থনীতির কাছে কৃষি পণ্য ও খাদ্য নিরাপত্তাবন্ধক রাখা হয়েছে।পুজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় বাজারে রাষ্ট্রর হস্তক্ষেপ আছে। সরকার ভর্তুকি, নিম্নতম মূল্য নির্ধারণ ও আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষা করছে।

পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কৃষি ও বাজার ব্যবস্থা গঠন করার কথা থাকলেও আসলে কোন পদ্ধতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে বিষয়ে অস্পষ্টতার কথা তুলে ধরেন এই মন্ত্রী।

মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা থেকে কৃষিকে রক্ষা করতে মূল্য কমিশন গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

কর্মজীবী নারীর সভাপতি ও সংসদ সদস্য শিরীন আক্তার সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন।

এসএসআর