তিন বছর পর চূড়ান্ত হচ্ছে আইডিআরএ’র জনবল কাঠামো

আইডিআরএ

IDRAপ্রতিষ্ঠার চার বছরেও জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।পুরনো কাঠামো আর জনবল সংকট নিয়ে কোনোরকমে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। জনবল ঘাটতির কারণে বিমা শিল্পে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও এ শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠন করা এ প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। এমন অবস্থায় জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করতে কাল সোমবার বৈঠকে বসছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আইডিআরএ’র প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে সংস্থার কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে ওই বৈঠকে।

জানা যায়, বিমা শিল্পে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিমা আইনকে যুগোপযোগী করে ২০১০ সালের মার্চ মাসে নতুন বিমা আইন প্রণয়ন করা হয়। এর আলোকে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গঠিত হয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। শুরু থেকেই সংস্থাটিতে রয়েছে জনবল সংকট। ওই সময়ে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় কিছু অফিসার, জুনিয়র অফিসার এবং এমএলএসএস অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী হওয়া নিয়ে বিরাজমান জটিলতায় গত দুই বছরে ১৬ জন অফিসার ও জুনিয়র অফিসার আইডিআরএ ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে বর্তমানে সংস্থাটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ৩৮ জন। নেই কোনো সদস্য। এমএলএসএস মিলে এর সংখ্যা মাত্র ৫৫ জন।

এদিকে বর্তমানে নতুন অনুমোদন পাওয়া ১৪টি কোম্পানি নিয়ে মোট বিমা কোম্পারির সংখ্যা ৭৬টি। বিমা কোম্পানির চেয়ে অর্ধেক কম জনবল দিয়ে চলছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যক্রম। এর ফলে প্রতিনিয় মাত্র ৩৮ জন কর্মকর্তা ৭৫ কোম্পানি তদারি করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এর ফলে যে উদ্দেশ্যে গঠন করেছে সংস্থাটি তা থেকে ছিটকে পরছে কর্তৃপক্ষ। আর এ দূরাবস্থার অবসানের জন্য বার বার উদ্যোগ নেওয়ার পরও তা থেমে যায়। আর এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে সংস্থাটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দূরত্ব আর একগুঁয়ে মনোভাবের কারণে বিষয়টি এগোয়নি বলে জানা গেছে।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য দুই থেকে আড়াইশ কর্মকর্তার প্রয়োজন। সঙ্কট দূর করতে ১৯৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা করে এর সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) চূড়ান্ত করে ২০১১ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইডিআরএ। পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত বছরের ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯৪ জন লোকবলসংবলিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় তা চূড়ান্ত করতে আইডিআরএ পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা অনুমোদন করা হয়নি।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে না জানিয়েই তৎকালীন চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে তিনি ১৭৯ জনের কথা জানান। ফলে আটকে যায় জনবল কাঠামোর অনুমোদন।

এদিকে, গত ২৬ জানুয়ারি এম শেফাক আহমেদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিম জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন। তার আলোকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি ইস্যু করেন বর্তমান চেয়ারম্যান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন আইডিআরএ জন্য অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে ১৯৫ জনবলের জন্য পদ সৃজনের প্রস্তাবের বিপরীতে ৯৪ জনবল নিয়োগের জন্য অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে পদ সৃজনে এবং যানবাহন ও সরঞ্জাম টিওএন্ডইভুক্তকরণে শর্তসাপেক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর আগে সম্মতি দিয়েছিল, তা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনায় আপতত যথেষ্ট। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজনবোধে সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

জানা গেছে, এ আবেদনের প্রক্ষিতে আগামি ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি আইডিআরের কর্মকর্তাদের ডেকেছে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে আইডিআরএ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিম অর্থসূচককে বলেন, আইডিআরএ’র জন্য নতুন জনবল চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এর প্রেক্ষিতে আগামিকাল তারা আমাদেরকে যাওয়ার জন্য বলেছে। আশা করছি কালকের বৈঠকে এর একটি সমাধান হবে।

তিনি বলেন, আপাতত কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো জনবল অনুমোদন দিলেই হবে। প্রয়োজন হলে আমরা এর পর আবারও জনবলের জন্য আবেদন করবো।

 

জিইউ