রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র : ৩০ লাখ মানুষ পড়তে পারে চরম ঝুঁকিতে

  • তপু রায়হান
  • February 15, 2014
  • Comments Off on রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র : ৩০ লাখ মানুষ পড়তে পারে চরম ঝুঁকিতে
ruppur
এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনে দেশ চরম নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে রংপুরসহ ওই এলাকার ৩০ লাখের মতো মানুষ। আর কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে তবে ওই বিপুল সংখ্যক লোকজনকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলেও তাদের ভয়। ফলে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়।

তাই জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন পরমাণু বিশেষজ্ঞরা। তাদের কামনা দেশে চেরনোবিল কিংবা ফুকোশিমার মতো কোনো ট্রাজেডি না ঘটুক।

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প : সম্ভাবনা ও উদ্বেগ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভায় পরমাণু বিশেষজ্ঞরা এই কথা বলেন।

অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) ও ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট যৌথভাবে আয়োজন করে।

বাপা সহ-সভাপতি ও স্টামফোর্ড ইউনিভাসিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মতিন, আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. জসিমউদ্দিন আহমেদ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সহ-সভাপতি ডা. এম আবু সাইদ, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য।।

অনুষ্ঠানে জসিমউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে পরমাণু প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে ওই এলাকা ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটে তবে এই রেডিয়েশন সারা দেশ ছড়িয়ে পড়বে‌ বলে জানান তিনি। আর ২ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ লাখ মানুষকে সরানো সম্ভব হবে না। এরপর স্বল্প সময়ের মধ্যে এতো মানুষের পুনর্বাসন করাও দুরহ হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এর ফলে পানি দূষণ হবে খুব বেশি পরিমাণে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক হওয়ার কারণে সারা দেশের পানি দূষণ হবে বলে মনে করেন তিনি। রানা প্লাজার ৩ হাজার মানুষকে সরাতে জাতীয়ভাবে হিমশিম খেতে হয়েছে। আর ৩০ লাখ মানুষ সরানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার চেরনোবিলের দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৪০ হাজার লোককে সরাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তাদের স্থাপনা সরাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।

সেই প্রেক্ষিতে তিনি মনে করেন বাংলাদেশের যে সামর্থ তাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।

এর জন্য তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য পরামর্শ দেন। দেশের মানুষের নিরপত্তার কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

সভায় ড. আব্দুল মতিন বলেন, মোট খরচের হিসাব না করে এই প্রকল্পে প্রথম ধাপে ৫২৪২ কোটি টাকার অনুমদোন দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের প্রথমে ধাপ অতিক্রম করতে এটা কতটুকু সম্ভব তা তিনি জানেন না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে আবার এক রাশিয়ান কোম্পানিই ফিজিবিলিটি রিপোর্ট দেবে। তাতে তারা খরচ আরও বাড়িয়ে দেখাবে বলে মনে করেন তিনি। তাছাড়া বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের পর থেকে নিউক্লিয়ার বিষয়ে আর কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি বলে জানান এই বিজ্ঞানী।

তাই তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জনশক্তি তৈরি ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। জনশক্তি প্রস্তুত না করে রিঅ্যাক্টর তৈরি না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, রিঅ্যাক্টর তৈরি করতে হলে আগে দরকার জনশক্তি(যারা প্রকল্পকে চালাবে), অর্থ, সরকারি ও সাধারণ জনগণের সমর্থন ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা। তবে এই অবস্থা আমাদের দেশে নাই। তিনি স্বদেশি বিজ্ঞানীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এই কাজে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে ড. মো. আব্দুল কাইউম চেরনোবিল ও ফুকোশিমা দূর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে এই কাজে এগুনো উচিত বলে মনে করেন।

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, এই প্রকল্পে দুর্ঘটনা হলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। রেডিয়েশনের কারণে ক্যান্সার তৈরি হবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পানি দূষণ থাকবে। চাষ করা সব খাবারে চলে যাবে রেডিয়েশন। তাই জনগণের স্বার্থে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ তার।

অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, নিউক্লিয়ার প্রশিক্ষণ এখন থেকে শুরু করা উচিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। অন্যান্য উপাদান শেষ হলে নিউক্লিয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে আরও আলোচনা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।