ফুঁসে উঠেছে খুলনা হার্ডবোর্ড মিল শ্রমিকরা

  • Emad Buppy
  • January 29, 2014
  • Comments Off on ফুঁসে উঠেছে খুলনা হার্ডবোর্ড মিল শ্রমিকরা

Hardboard-millsকারখানা চালু এবং তিন মাসের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পূর্বের ন্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন তারা।
বুধবার দুপুরে বিক্ষিপ্ত এসব শ্রমিকরা কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন।
জানা যায়, দেশের একমাত্র হার্ডবোর্ড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি শিল্পনগরী খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত। লাভজনক হওয়ায় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। খুলনাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন-প্রতিবাদ ও বিদেশি হার্ডবোর্ডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধের ৩৩ মাস পর আবারও ধীরে ধীরে সেটিকে সচল করে কোন রকমে চালু করা হয়। শুরু হয় হার্ডবোর্ড মিলের উৎপাদন। কিন্তু কাঁচামাল ঘাটতি, ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধি ও আর্থিক লোকসান দেখিয়ে বারবারই মুখ থুবড়ে পড়ে মিলটির উৎপাদন।
অর্থিক সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০১১ সালের ১৬ জুলাই খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের উৎপাদন প্রায় দুই বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে হার্ডবোর্ড মিল ব্রেক ইভেনে যাওয়ার শর্তে ১০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই মিলটি ওভার হোলিং ও উৎপাদনে যায়। কিন্তু চারমাসের মধ্যেই ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর মিলটি ফের বন্ধ হয়ে যায়। চালু-বন্ধের এই খেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিলটির প্রায় এক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী-কর্মকর্তা। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।
বিশেষ অনুসন্ধানীতে জানা যায়, সুন্দরবনের আগামরা সুন্দরী কাঠের ওপর নির্ভর করে নগরীর খালিশপুরে ৯.৯৬ একর জমির ওপর কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন ১৯৬৫ সালে হার্ডবোর্ড মিল স্থাপন করে। ১৯৬৬ সালে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতেই ২১৫ লক্ষ বর্গফুট হার্ডবোর্ড উৎপাদন দিতে থাকে এ মিলটি। উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি লাভ করায় স্বর্ণপদক পায় খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন বিভাগের মাধ্যমে সুন্দরবনের আগামরা সুন্দরীকাঠ হার্ডবোর্ড মিলকে দেয়া বন্ধ করে। এরপর থেকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির জ্বালানি কাঠ বেশি দামে সরবরাহ করে মিলটির উৎপাদন চালু রাখে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মিলটির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। শুল্কমুক্ত বিদেশি হার্ডবোর্ড বাজারে ছেয়ে গেলে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হয় মিল কর্তৃপক্ষ। তবে বিদেশি হার্ডবোর্ডের চেয়ে দেশীয় হার্ডবোর্ড গুণগতমান ভালো এবং টেকসই বেশি হওয়ায় কিছুটা জনপ্রিয়তা পায় এই দেশীয় পণ্য। সরকার ভর্তুকি না দেয়ায় ও চড়া দামে দেশীয় জ্বালানি কাঠ ক্রয়সহ দফায় দফায় ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে মিলটি।
২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিলটি বন্ধের পর তা ২০০৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মিলটি পুনরায় চালু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৪৪ বছর মিলটির কোনো বিএমআর (ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রিপ্লেসমেন্ট) না হওয়ায় পুরানো যন্ত্রপাতি দিয়েই কোনো রকম চলতে থাকে হার্ডবোর্ড মিলের উৎপাদন। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটি ও মূলধনের অভাবে দফায় দফায় বন্ধ হতে থাকে পুনরায় উৎপাদনে যাওয়া এই মিলটি।
হার্ডবোর্ড মিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মশিউর রহমান ডাবলু বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে তিন মাসের মজুরি না পেয়ে হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন পার করছেন। শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে মিল চালু ও মজুরি পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা পরিশোধ করা হয়নি। তাই কর্তৃপক্ষের এ ব্যর্থতার কারণে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী তাদের রুটি-রুজি ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন। মিল চালু ও মজুরি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।