
সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন মারা যায় গড়ে ২০ জন মানুষ। ক্ষতি হয় প্রায় কোটি টাকার। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দেওয়া তথ্যে দেখা যায় দেশে প্রতি বছর গড়ে ছয় হাজার মানুষ মারা যায়্। যদিও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির (বিআরটিএ) হিসাবে এই সংখ্যা মাত্র ৩০০০।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা বললো ভিন্ন কথা। তাদের দাবি আগের তুলনায় দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। সংস্থাটির দাবি তারা জরিপ করে দেখেছে ২০১৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৪৬ জন মারা যায়। ২০১২ সালে তার চিত্রটি আরও ভয়ংকর ছিল। ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে মারা গিয়েছিল ২০০৯ জন।
তবে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল এ্যাডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান জানান, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে কিনা সে পরিসংখ্যানে না গিয়ে কিভাবে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা যায় এখন সেদিকে নজর দিতে হবে।
বিভন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মতে এই অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রেল হতে পারে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
মারুফ রহমানের মতে, ‘বহুমাত্রিক সমন্বিত ডরিবহন নীতিমালা’ এটা এখন বাস্তবায়ন করা দরকার। শুধু সড়ক কেন্দ্রিকতা আমাদেরকে বাদ দিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে রেলের ব্যাপক উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। সড়কের প্রতি নির্ভরতা কমাতে হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মারা যায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই হলো পথচারী। সেক্ষেত্রে একটি আধুনিক নগরের নাগরিক সুবিধা দিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ গুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
মানুষ কোন পথ দিয়ে হাঁটবে এমন কতৃপক্ষকে সে সুব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এমন দাবি জানিয়ে মারুফ বলেন, জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রীজ এগুলোর যথাযথ মনিটরিং নাথাকায় পথচারী পারাপার সহায়ক এ জায়গা গুলো এখন মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটেদের দখলে। তাই সাধারণ মানুষ বেগুলো ব্যবহার করেনা বরং ঝুকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করে।
মারুফ রহমান আরও জানালেন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, আধুনিক উন্নয়ন চিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয় হলো দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে পৃথিবী জুড়ে রেলওয়ে এক শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের দেশেও এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত, বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, পণ্য পরিবহনে, অর্থনৈতিক প্রসার এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে রেলকে অগ্রাধিকার প্রদান করা জরুরি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ এ সালে বাংলাদেশের রেল লাইন নেটওয়ার্ক ছিল ৪৪১ কিঃমিঃ। ১৯৬৯-৭০ সালে তা দাড়ায় ২৮০০ কিঃমিঃ। যা বর্তমানে ৩ লক্ষ কিঃমিঃ বিস্তৃত হয়েছে। তবে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রেলব্যবহারে খুব বেশি আগ্রহী হয়নি মানুষ।
তবে পরিবেশ সংগঠন ফুয়ারার পরিচালক ইকরাম আমেদ জানালেন, সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করলে রেল ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। দেশে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, মনিটরিং ঠিক থাকলে ট্রেনে এ ধরণের দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
মহাসড়কগুলোতে অতিরিক্ত যান বাহনের চাপ, অদক্ষ চালক, মেয়াদ উত্তির্ণ যানবাহন চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা, মহাসড়কের উপর যত্রছত্র গাড়ী থামানো এবং অসতর্ক ভাবে রাস্তা পারাপারের কারনে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি প্রশাসনের। তবে মহাসড়ক প্রসস্থ, মেয়াদ উত্তির্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ, ট্রেনিং ও লাইসেন্স প্রাপ্ত চালক এবং ট্রাফিক আইন মেনে চললে সড়ক দূর্ঘটনা অনেক অংশে রোধ করা সম্ভব বলে আশাবাদ জানালেন এসব বিশিষ্ট জনেরা।