বৈদেশিক বাণিজ্যে সোনালী ব্যাংকের অবদান কমছে

sonali bank hacking

Sonali-Bank-0120130801120945বৈদেশিক বাণিজ্যে সোনালী ব্যাংকের অবদান কমছে। রাষ্ট্রায়ত্ব এই ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ব্যাংকটির দেওয়া ঋণপত্রের(এলসি) মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ২০১৩ সালে আগের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের তুলনায় বেশ কিছুটা কমেছে। বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকটির মাধ্যমে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে আমদানি কমেছে ৩২ শতাংশ এবং রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকটির কাঁধে বিরাট অংকের খেলাপি ঋণ থাকায় এবং তা আদায়ে অধিকতর মনোযোগি হয়ওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্য খাতে তেমন মনোযোগ দেওয়া যায়নি।এছাড়া হলমার্ক কেলেঙ্কারীর ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে সোনালী ব্যাংক সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব চলে আসে বিশ্বের নামিদামি ব্যাংকগুলোর। ফলে ব্যাংকটির সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয় বিশ্বের অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের ঋনপত্রও নিতে অস্বীকৃতি জানায় অনেক ব্যাংক।

অবশ্য ব্যাংকটি দাবি করেছে দেশে খাদ্য এবং বিপিসি’র আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে তাদের মাধ্যমে আমদানি কমেছে। তবে হোটেল শেরাটন শাখা ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখায় আমদানি বিপুলভাবে হ্রাস পাওয়ায় তাদের আমদানি কমেছে বলে ব্যাংকটি স্বীকার করেছে।

আর রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা হোটেল শেরাটন শাখা, নারায়নগঞ্জ করপোরেট শাখা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখায় রপ্তানি হ্রাস পাওয়াকে দায়ি করেছে।

প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ব এই ব্যাংকটির বেশ কিছু গ্রাহক বড় অংকের টাকা নিয়ে জালিয়াতি করেছে। অনেকেই শোধ করেনি ঋণ। দেশের সবচেয়ে আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারীর দ্বায় বহনের পাশাপাশি হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বোঝাও এখন ব্যাংকটির কাঁধে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করা হয় ৩০ হাজার ৭৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকটির ঋণপত্র নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে থাকে বিদেশিরা। ফলে ২০১২ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে পণ্য আমদানি কমে আসে ২ হাজার ১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। এই ধারাবাহিতকায় ব্যাংকটির মাধ্যমে ২০১৩ সালে পন্য আমদানি কমেছে ২০১১ সালের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং ২০১২ সালের তুলনায় কমেছে ৩২ শতাংশ।

২০১৩ সালে দেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ব্যাংকটির মাধ্যমে ২০১২ সালের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ২ হাজার ৪৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা যা প্রায় ২৮ শতাংশ কম।

জানা গেছে ২০১২ সালের মতোই ২০১৩ সালে দেশের ভেতরকার অনেক ব্যাংকও সোনালী ব্যাংকের এলসি নেওয়া বন্ধ করে দেয়। মূলত আস্থা হীনতার কারণেই তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়।

তাছাড়া ওই বছরের মাঝামাঝিতে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালীসহ কয়েকটি ব্যাংক পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছিলো। এর নেতিবাচক প্রভাব আমদানি-রপ্তানিতে পড়ছে বলে জানা গেছে।

২০১৩ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের  ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের বছর এর পরিমাণ ছিলো ৩৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণ কমেছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

গত বছর ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ও গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে আদায় কমেছিলো এক হাজার ৩৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে আদায় বেড়েছে ৪ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপীর কাছে থাকা ৪ হাজার ২৪১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে আদায় করেছে ৭০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত অর্থসূচককে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে কিছু সমস্যা থাকবেই। বিদায়ী বছরই ব্যাংকিং খাতের জন্য বেশ সুখকর ছিল না সে কারণে আর্থিক সূচকগুলোর কম বেশি অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া গত বছর খেলাপী ঋণ আদায়ই আমাদের মূল পরিকল্পনা ছিলো। এ কারণে আমরা খেলাপী ঋণ আদায়ে সফল হয়েছি। ধীরে ধীরে অন্যদিকগুলোও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে তিনি জানান।