রাজধানীর বেশির ভাগ কাঁচাবাজারেই পাইকারির তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য। ক্রেতাদের দাবি বাজারের দাম নিয়ন্ত্রনের কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছে মতো দাম রাখছেন পণ্যের। তবে খুচরা বিক্রেতারা সেটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি পরিবহন, দোকান ভাড়া সহ কর্মচারি বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দাম রাখতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে হাতিরপুল,শান্তিনগর, খিলগাও, ফকিরাপুল, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর-১১ নম্বর বাজারে রাজধানীর শ্যামবাজার, মিরপুর-১ নম্বর, কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের পণ্যের দামের তুলনায় তিন গুণের বেমি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ পণ্য।
যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আড়াই টাকা কেজি টমেটো এনেছেন ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন। পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন ৯ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে দেখা যায় ওই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
তিনি অর্থসূচককে জানান, প্রতিমণ টমেটো ১০০ টাকা কিনে পরিবহন খরচ পড়েছে আরও ২০০ টাকা করে। পণ্যের মূল্যের চেয়ে এখন পরিবহণ খরচ বেশি। জামালপুর থেকে ৪ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনে এনেছেন শাজাহান মিয়া। ১৮ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে বেগুন এনে বিক্রি করছেন ১০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই বেগুন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুলা পাইকারিতে কেজিপ্রতি ৪ টাকা-খুচরাতে ২০ টাকা, পেপে পাইকারিতে ৬ টাকা-খুচরাতে ২০টাকা, ওলকপি পাইকারিতে ৩ টাকা-খুচরাতে ২০ টাকা, মটরশুটি পাইকারিতে ২৮ টাকা-খুচরাতে ৬০ টাকা, গাজর পাইকারিতে ১২ টাকা-খুচরাতে ৩০ টাকা, উসতা পাইকারিতে ১৫ টাকা-খুচরা বাজারে ৫০ টাকা, শশা পাইকারিতে ১৮ টাকা-খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আলু পাইকারিতে ৮ টাকা-খুচরাতে ১৫ টাকা,কাঁচামরিচ ২৪ পাইকারিতে টাকা-খুচরাতে ৪০ টাকা,শিম পাইকারিতে ১৬ টাকা-খুচরাতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধনিয়া পাতা কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পাতাকপি পাইকারিতে ৮ টাকা ও ফুলকপি ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা বাজারে ২৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ব্রকলি (সবুজ ফুলকপি)২০টাকা-খুচরাতে ৪০ টাকা, বিনস ২৫ টাকা- খুচরাতে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, বাজারে লালশাক, লাউশাক, পালং শাক, মুলাশাক, কুমড়াশাক, ডাটাশাকসহ নানা ধরণের শাক পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে কয়েকগুন বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারে ৭০০ গ্রাম ওজনের বেশি প্রতিহালি ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকা। কাতল মাছ পাইকারিতে ২০০টাকা –খুচরাতে ৩৫০ টাকা, রুই মাছ ২৫০টাকা-খুচরাতে ১৪০ টাকা, বড়রুই ১৮০ টাকা-খুচরাতে ২৮০ টাকা, সিলভার কার্প পাইকারিতে ৭০ টাকা-খুচরাতে ১২০ টাকা, বেলে ৭০ টাকা-খুচরাতে ২৫০ টাকা, চাপিলা পাইকারিতে ৮০ টাকা-খুচরাতে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা হোসেন আলী অর্থসূচককে জানান, কাঁচামাল এক দিনে বিক্রি না হলে তা পরের দিন ক্রেতারা নিতে চায় না। এতে অনেক সময়ে কিনে আনা দামের চেয়েও কমে বিক্রি করতে হয় বলে জানান তিনি।তাছাড়া এখন দোকান ভাড়াওঅনেকবেশি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানালেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক একটু বেশি ব্যবসাই করতে চায়। তারা পরিবহন ও বাড়তি ভাড়ার যে অযুহাত দেখায় তা বাস্তব সম্মত নয়।
তিনি জানান , পণ্য পরিবহনের বেশির ভাগ খরচটা পাইকাররা মূল্য সংযোজনকরেই বিক্রি করে। ঢাকার অভ্যন্তরে নেওয়ার জন্য তারা যে মূল্য সংযোজিত করে সেটা ঠিক না।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন বাড়তি দাম রাখায় বিপাকে ক্রেতারা। আর বাজারে দাম তদারকির কোনো সরকারি ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় ক্ষুব্ধও তারা।
বাজার মনিটরিং বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও সেখান থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ক্রেতাদের আশা সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার হলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর সরকার এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।