
বাণিজ্য মেলায় বাঘ! কথাটি শুনলে হয়তো অনেকের চোখ কপালে উঠবে। উঠারই কথা। লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে বাঘ আসবে কিভাবে? কিন্তু যে হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাতে লোকালয়ে বন্য পশু তো আসতেই পারে!
মেলায় দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সুন্দরবনের বাঘকে নিয়ে এসেছেন ইকো পার্কের কনসেপ্ট ডিজাইনার জামিউর রহমান লেমন। তবে সে বাঘ প্রাকৃতিক নয়, কৃত্রিম। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ক্লান্তি দূর করতে আর শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্যই মেলায় সুন্দরবনের আদলে তৈরি করা হয়েছে ইকো পার্ক।
এখানে এসে অবাক হতে হয় সকল বয়সের মানুষকেই। মনে হবে সত্যি সত্যিই সুন্দরবনে চলে এসেছেন। পার্কটি সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পার্কটিতে রয়েছে বাঘ, হরিণ, সাপসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উভয় ধরনের প্রাণী এবং গাছ-গাছালি।
সবাই দেখছেন এবং উপভোগ করছেন কৃত্রিম এই সুন্দরবন। আড্ডা জমাচ্ছেন পার্কের চারদিক ঘিরে। যারা সুন্দরবন দেখেনি তাদের জন্য সুন্দরবন দেখার প্রথম সুযোগ এটি।
পার্কের ভেতরে গাছের ডালে ডালে ঝুলছে বানর, গা এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে হরিণ, শিকারের প্রত্যাশায় ঘাপটিমেরে বসে আছে বাঘ, জলে এবং স্থলে অবসর সময় পার করছে কুমির, গাছের খণ্ডের মতো শুয়ে আছে অজগর সাপ।
ভেসে ওঠা মাছকে থাবা মেরে নিতে ঠোঁট তাক করে বসে আছে বক আর মাছরাঙ্গা। লেজ উঁচু করে ডালে বসে আছে টিয়া ও দোয়েল, কাঠ ঠোকরাচ্ছে কাঠ ঠোকরা। পাতায় পাতায় বসে আছে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। জমাট বেঁধে আছে শামুকের দল। পাখিদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে নিড়, খরগোশের জন্য রয়েছে কয়েকিট খোঁপ। এছাড়াও সেখানে স্থান পেয়েছে মৌচাক ও মৌমাছি। কিন্তু এসব কিছুই কৃত্রিম।
তবে পার্কটিকে প্রাণবন্ত করতে রয়েছে জীবন্ত প্রাণীও। আছে খরগোশ, রাজহাঁস, পাতিহাঁস, তিতির পাখি। আছে সুন্দরবনের গোলপাতা, কেওড়া, সুন্দরী ও ওষুধী শ্বাসমূলের মতো জীবন্ত গাছ।
তাছাড়া, সুন্দরবনের সিডরপরবর্তী দৃশ্যকে তুলে ধরতে রয়েছ ডাল-পাতাহীন ছিন্নভিন্ন কৃত্রিম বৃক্ষরাজী। সেগুলোতে নতুন করে পাতা গজাচ্ছে।
এছাড়া পার্কের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট লেক। লেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির জীবন্ত মাছ, কচ্ছপ ও প্রায় দেড় শ ব্যাঙ।
পার্কটিকে পাহারা দিতে এবং দর্শকদেরকে পার্ক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে ১৫ থেকে ১৬ জন প্রকৃতিপ্রেমী দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে ২ টি ছনের ঘর।
তবে রাতের বেলায় সুন্দরবনের এই ইকো পার্কটির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেকগুণ। এ সময় লেকের ব্যাঙগুলোর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকের সাথে পার্কে থাকা ২১ টি হারিকেনের বৈদ্যুতিক আলোতে এক অপরূপ সৌন্দর্য্যময় নগরীতে রূপ ধারণ করে এটি।
এত কিছুর আয়োজন কিভাবে জানতে চাইলে জামিউর রহমান লেমন অর্থসূচককে জানান, বিদেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে টোকিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এ ধরনের আয়োজন দেখার পরথেকেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এ ধরনের প্রাকৃতিক বনের আদলে কৃত্রিম বন আয়োজনের চিন্তা করি।
বিটিভির সাবেক এ প্রযোজক বলেন, ‘বাংলাদেশের ট্যুরিজমকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বিস্তৃত এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখার জন্য ২০১৩ সালে কাজ শুরু করি। মেলার ১৮তম আসরে সফলভাবে প্রথম ইকো পার্কের আয়োজন করেছি।’
বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব লেমন বলেন,মেলায় এসে মানুষ সুন্দরবনের স্পর্শ অনুভব করতে পারবেন। একই সঙ্গে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে ট্যুরিজম খাত বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সুন্দরবন সপ্তাশ্চর্যের প্রথম স্থানটি দখল করেতে পারবে বলে অর্থসূচকের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা মঞ্চের প্রেসিডেন্ট লেমন বলেন,এটা দেখে মানুষ খুব মজা পাচ্ছে। সবার জন্য উন্মুক্ত, কোনো টিকেট লাগে না। তবে এর ভেতরে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে না।
অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের স্পন্সর হিসেবে এই পার্ক তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এখানে যে টাকা খরচ হয়েছে তা উঠানো সম্ভব না। বেসিক ব্যাংকের স্পন্সর ও দুইটি ছোট বিজ্ঞাপন থেকে খরচের মাত্র ৬০ ভাগ টাকা আসবে। আমাদের দেশের বড় কোম্পানীগুলো সহায়তা করলে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সহজ হবে।
আগামি বছর এ আয়োজনের সঙ্গে কক্সবাজারের সী-বিজ এবং বাংলাদেশের একটি আদর্শ গ্রামের দৃশ্য চিত্র তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
পার্কটির এ্যানিমেল ডিজাইন করেছেন শুরেষ পান্ডে,ল্যান্ড ডিজাইন করেছেন জাহাঙ্গির আলম এবং তৈরি করেছেন নাজিয়া ফারহা।
জেইউ/এআর