মন্ত্রী-এমপিদের কোম্পানির শেয়ারের পালে হাওয়া

Min_MP_Comনতুন সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কোম্পানির শেয়ারের পালে হাওয়া লেগছে। মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণের পর দিন তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ারের দরে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে।প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে এদিন। অন্যদিকে মন্ত্রীত্ব হারানো নেতাদের কোম্পানির শেয়ারের বেলুন চুপসে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত সপ্তাহে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়ছে। সোমবার এ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ শপথ নিয়েছে। আগের মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য পদ হারিয়েছেন। আবার একেবারে নতুন কিছু মুখ মন্ত্রিপরিষদে ঢুকেছে। এ পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে এসব নেতাদের মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ারে।

যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে তার মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ ন হ মোস্তফা কামালের মালিকানাধীন সিএমসি কামাল টেক্সটাইল, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ইউসিবিএল ও আরামিট সিমেন্ট। অন্যদিকে মন্ত্রীত্ব হারানো ফারুক খানের সামিট পাওয়ার ও সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায়, কমে ৩৫ শতাংশের দাম। এদিন ডিএসইতে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে দশমিক তিন শতাংশ। অথচ মন্ত্রী-এমপিদের মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

বিশ্লেষকদের মতে মনস্তাত্ত্বিক কারণে এমনটি হয়েছে। মন্ত্রীত্বের বিষয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এর সঙ্গে কোম্পানির মৌলভিত্তর কোনো সম্পর্ক নেই।

পরিকল্পনা মন্ত্রী: গত মহাজোট সরকারের সময় মন্ত্রীত্ব না পেলেও অর্থমন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কমাল (লোটাস কামাল)। তার তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিএমসি কামাল। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম কার্যদিবসে সিএমসি কামালের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দুই দশমিক ৭০ শতাংশ বা ৯০ পয়সা।

লোটাস কামাল বিমা খাতের কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের প্রধান স্পন্সর। মঙ্গলবার এ কোম্পানির শেয়ারের দাম পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৩১ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা হয়।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী : নতুন সরকারে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। পুঁজিবাজারের তার কোম্পানি হলো আরামিট লিমিটেড, আরামিট সিমেন্ট ও ইউসিবিএল। সোমবার আরামিট লিমিটেডের শেয়ারের দাম সামান্য কমলেও বাকী দুটির শেয়ারের দাম যথেষ্ট বেড়েছে। এর মধ্যে আরামিট সিমেন্টের শেয়ারের দাম বেড়েছে নয় দশমিক ৯১ শতাংশ বা পাঁচ টাকা আট পয়সা; আর ইউসিবিএলের শেয়ারের দাম এদিন তিন দশমিক ৪৭ শতাংশ ব নয় পয়সা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের কর্ণধার জাহিদ মালেক নতুন সরকারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। মঙ্গলবার বিডি থাইয়ের শেয়ারের দাম বেড়েছে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ বা এক টাকা ছয় পয়সা।

সংসদ সদস্য: মন্ত্রীদের কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আওয়ামী সংসদ সদস্যদের মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ারের দাম। মঙ্গলবার নোয়াখালি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত মোর্শেদ আলমের বেঙ্গল উইন্ডসরের শেয়ারের দাম বেড়েছে আট দশমিক ৮২ শতাংশ বা ছয় টাকা।

অন্যদিকে সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত মাহফুজুর রহমান মিতার রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম সাড়ে আট শতাংশ বা নয় টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় উঠেছে।

সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান: গত মহাজোট সরকারের আমলে দুই দুইটি মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন ফারুক খান। প্রথমে ছিলেন বাণিজ্য ও পরে দায়িত্ব পালন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। নব গঠিত মন্ত্রী পরিষদে জায়গা পাননি তিনি। যার নেতিবাঁচক প্রভাব পড়েছে তার কোম্পানির শেয়ারের দামের ওপর। ওই দিন তার কোম্পানির সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে এক দশমিক ৬৪ শতাংশ বা এক টাকা ২০ পয়সা। এ দিন সামিট পাওয়ারের শেয়ারের দাম ২০ পয়সা কমেছে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য: এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড.মিজানুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, মন্ত্রী পরিষদে থাকা না থাকার ওপর কোম্পানির শেয়ারের দাম নির্ভর করে না। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন একটি বিষয় কাজ করতে পারে যে মন্ত্রী পরিষদে থাকার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে হয়তো তাদের কোম্পানিগুলো একটু বাড়তি সুবিধা পেতে পারে।

তিনি বলেন, ব্যবসা ভালো হলে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস বাড়বে। এ জন্য তাদের কোম্পানিগুলো ভবিষৎ ভালো হবে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তবে বাস্তবে হয়ত তেমনটি নাও ঘটতে পারে।

অন্যদিকে ব্র্যাক ইপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ ফরাজী অর্থসূচককে বলেন, এটি আসলে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। বিনিয়োগকারীরা হয়তো মনে করছেন মন্ত্রী হওয়ার ফলে কোম্পানিগুলো ভিবষ্যতে ভালো ব্যবসা করবে। এ আশাবাদ থেকে এসব কোম্পানির শেয়ারে তাদের ঝোঁক বাড়ায় দামের উপর তার প্রভাব পড়েছে।

এ সম্পর্কে এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী মাহবুব এইচ মজুমদার অর্থসূচককে বলেন, মন্ত্রী হওয়া না হওয়ার সঙ্গে কোম্পানির দামের হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কিত হওয়া উচিত নয়। মন্ত্রী হওয়ার ফলে রাতারাতি কোনো উদ্যোক্তার একটি কোম্পানির ফান্ডমেন্টাল বদলে যাওয়া সম্ভব নয়।আর ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন না হলে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়।

 

জিইউ/এমআরবি