বাংলাদেশে খাদ্য সমস্যা প্রকটঃ অক্সফাম

foodসরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির বুলি আওড়ালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এখনও বিশের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। বিশেষ করে খাবারের দুষ্প্রাপ্যতা এবং অপুষ্টি এখনো বিষিয়ে তুলছে এদেশের মানুষের জীবন। সম্প্রতি অক্সফাম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়, খাবারের মান এবং সহজলভ্যতা ক্রমে দিক বিশ্বের ১২৫ টি দেশের মধ্যে ১০২ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। খবর রয়টার্স বার্তা সংস্থার।

সংস্থাটি ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য নিয়ে এ সূচক তৈরি করেছে।

অক্সফাম নামে পরিচিত অক্সফোর্ড কমিটি ফর ফেমিন রিলিফ প্রধানত দরিদ্রতার কারণ এবং সমাধান নিয়ে গবেষণা করে থাকে। সংস্থাটি কর্তৃক প্রকাশিত সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সাথে খাবারের দাম এবং মানের তুলনামূলক ক্রমে  শীর্ষে রয়েছে নেদারল্যান্ড এবং আফ্রিকার দারিদ্যপীড়িত দেশ চাদের অবস্থান সবার শেষে। বাংলাদেশ সহ ভারত (৯৭),পাকিস্তান (৯৭) এবং লাওস (১১২) সর্বনিন্মে অবস্থানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, সুষম খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।

দেশের খাদ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য মতেও দানাদার খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং সহজ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করা গেলেও খাদ্যের পুষ্টিমানের বিবেচনায় বাংলাদেশ বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশের খাদ্য নিরপ্তার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পরেছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, কেবল খাদ্য মজুদই নয় যথাযথ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা খাদ্য নিরাপত্তার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রতিটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ১৮০৫ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণের বিষয়টি এদেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত হলেও কিন্তু বাস্তবে সবার ক্ষেত্রে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া খাদ্যমান সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকে অধিক পয়সা খরচ করেও পুষ্টিমান রক্ষা করে খাদ্য গ্রহণ করছে না। বিশেষ করে যথাযথ পুষ্টিগুণের অভাবে এবং অর্থের অভাবে প্রসূতি মা ও দুগ্ধ প্রদানকারী মায়েদের যথাযথ পুষ্টির অভাব তাদের সন্তানদের কেবল যে দুর্বল করছে তা নয় বরং বুদ্ধি বিকাশকে মারাত্মক রকম ব্যাহত করছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে খাদ্য সংকটের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪১ থেকে ৪৩ ভাগ শিশু কম ওজনের হতো। তবে ২০১০ সালে এ হার ৩৬ ভাগে নেমে এসেছে বলে প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে এ হার ৩৩ ভাগে কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকার আশাবাদী।

এই অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সতর্ক হচ্ছে সরকার। এসব পণ্যের মজুদ বাড়ানোর দিকে তাই মনোযোগী তারা। এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বাড়ানো হচ্ছে আমদানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই চাল, গম, ভোজ্যতেল ও ডালের আমদানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় গড়ে ৫৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে চাল, গম, ডাল ও ভোজ্যতেল আমদানি হয় ৬ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল আমদানি। আলোচ্য সময়ে পণ্যটির আমদানি বেড়েছে ৪১৮ শতাংশ, ভোজ্যতেল ৫৯, গম ৫১ ও ডাল প্রায় ২০ শতাংশ। এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম যেমন কমেছে, তেমনি ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে।

এদিকে অক্সফাম জানায়, পর্যাপ্ত খাবার থাকার পরেও পৃথিবীতে প্রতিদিন ৮৪ কোটি মানুষ না খেয়ে দিন যাপন করছে। অক্সফামের শীর্ষস্থানীয় গবেষক ডেবোরাহ হারডন বলেন, উৎপাদিত খাদ্যের সমবন্টন নিশ্চিত করতে পারলে এই সমস্যা সৃষ্টি হত না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামি ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষেরসংখ্যা ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।