
আজ ১২ই রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে পবিত্র মক্কায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের শেষ ২৩ বছর তিনি নবুয়তের মহান দায়িত্ব পালন করেন। ৬৩ বছর পর একই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এ দিনটি যেমন আনন্দের তেমনি শোকের।
মহানবীকে (স.)সাইয়্যিদুল মুরসালিন অর্থাৎ সব নবী ও রাসুলের নেতা বলা হয় । তিনি নিখিল বিশ্বের নবী। তার জন্মের সময় আরব দেশ অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। এ কারণে ওই সময়কে বলা হয় ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারের যুগ’।। ওই বর্বর যুগে পৈশাচিক স্বভাবের কালিমাতে মানুষের মানবিক গুণাবলির অপমৃত্যু ঘটেছিল। ওই বর্বর যুগে পৈশাচিক স্বভাবের কালিমাতে মানুষের মানবিক গুণাবলির অপমৃত্যু ঘটেছিল। সে অবস্থা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে মহান আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদকে (স.) পৃথিবীতে পাঠান।
পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আপনাকে (হযরত মুহাম্মদ) সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’
মহান আল্লাহ পুরো মানবজাতির জন্য সর্বাপেক্ষা কল্যাণকর, পরিপূর্ণ জীবন বিধান সংবলিত পবিত্র আসমানি কিতাব ‘আল কোরআন’ নাজিল করেন মহানবীর (স.) ওপর। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালকে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে মুসলিম বিশ্ব।
বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার মধ্য দিয়ে দিবসটি উযাপন করা হচ্ছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য এরই মধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে।এ দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথকভাবে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম থালেদা জিয়া।হযরত মুহাম্মদ (স.) ইতিহাসের এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বী অনেকেই তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পন্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদকে (স.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে হযরত মুহাম্মদকে (স.) এ জগতে প্রেরণ করেন। সর্বশেষ মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন তার নিকট অবতীর্ণ করে জগতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি বলেন, মহানবী তার অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অনুপম আচরণ, সৃষ্টির প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা, অতুলনীয় বিশ্বস্থতা, অপরিমেয় দয়া ও ক্ষমাগুণের জন্য তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহ্ আমাদের প্রিয়নবীকে (স.) ‘রাহমাতুল্লিল আল আমিন’ তথা সারা জাহানের জন্য রহমত হিসেবে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। পাপাচার, অত্যাচার, মিথ্যা, কুসংস্কার ও সংঘাতে জর্জরিত পৃথিবীতে তিনি মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মহানবীর (স.) সুমহান আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য অফুরন্ত কল্যাণ ও সফলতা রয়েছে। আজকের অশান্ত ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত মুখর বিশ্বে প্রিয়নবীর (স.) অনুপম শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের কাছে প্রার্থনা করি মহানবী (স.) এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা আমরা সবাই যেন নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি।তিনি বলেন, মহান আল্লাহ্ বিশ্বজগতের রহমত স্বরূপ হযরত মুহাম্মদকে (স.) এই জগতে প্রেরণ করেন। বিশ্বনবীর আবির্ভাবে পৃথিবীতে মানুষ ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জগতের মুক্তির সন্ধান পায় এবং নিজেদের কল্যাণ ও শান্তির নিশ্চয়তা লাভ করে।
কেএফ