নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে পরামর্শ চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

  • Emad Buppy
  • January 11, 2014
  • Comments Off on নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে পরামর্শ চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
Bangladesh bank

Bangladesh bankচলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) জন্য প্রণীত মুদ্রানীতি সম্পর্কে পরামর্শ চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের কাছে পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পেলেই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতে দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্থবির অবস্থার মধ্যে আছে। আগামি কয়েক মাসও এমন হতে পারে। তাই গতবছরের শেষ ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরের জন্য প্রণীত মুদ্রানীতি এবছরও বহাল রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ মুদ্রানীতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যারা মতামত পাঠিয়েছে তারা সবাই গত বছরের মুদ্রানীতি বহাল রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই বাংলাদেশ চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্থের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রনীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পণ্য ও সেবার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য বর্তমানের মতো প্রবৃদ্ধি সহায়ক ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি থাকছে। এক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে আগামিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে। তখন বিনিয়োগ ও প্রকৃত উৎপাদনের সাথে যোগানও বাড়বে। যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কাঙ্খিত মাত্রায় আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কম থাকলেও আগামি ৬ মাসে এটি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আমদানি-রপ্তানির গত ৫ মাসের ধারা থেকে বোঝাই যাচ্ছে এটি আগামিতে আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি সেবা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের ঋণের বড় একটি অংশ সরকার প্রতিবছর নিয়ে থাকে। এজন্য অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতামত চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা মতামত পাঠিয়েছেন তারা সবাই একই মুদ্রানীতি বহাল রাখার জন্য বলেছেন বলে তিনি জানান।

২০১৩ সালের শেষার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ঋণ বিতরণ যায় হোক আমরা লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশই রাখব। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আগামি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে এ খাতে ঋণ বিতরণ অনেক বেড়ে যাবে। আর অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি জরুরিও বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের মুদ্রানীতিতে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে (পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে) নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর অন্যতম কৌশল ছিল পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এ মুদ্রানীতির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল সঞ্চিত অর্থের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে রাখা এবং ডিসেম্বর ২০১৩ এর মধ্যে ব্যাপকমুদ্রার প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ডিসেম্বর ২০১৩-এর জন্য ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জুন ২০১৪-এর জন্য ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যাংকিং খাত  থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ২০১৩-১৪ সালের বাজেটে বর্ণিত ২৬ হাজার টাকায় সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত  হয়।

এছাড়া এ মুদ্রানীতিতে পূর্ববর্তী অর্ধ-বছরে (জানুয়ারি-জুন) হ্রাসকৃত রেপো রেট শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কম বজায় রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ মুদ্রানীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় আরও বৃদ্ধির প্রত্যাশা জ্ঞাপন করা হয়। অবশ্য এ সঞ্চয় পূর্বের চেয়ে ধীরগতিতে করা হবে বলেও মতামত ব্যক্ত করা হয়। তদুপরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সময় বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার বহাল রাখার পাশাপাশি টাকার মূল্যমানের অস্থিতিশীলতা হ্রাসের জন্যও উদ্যোগ অব্যাহত রাখে।

এসএই/এআর