
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশকে দেওয়া অর্থ সহায়তা কাটছাঁটের বিষয় পুন:র্বিবেচনা করতে শুরু করেছে সবচেয়ে বড় দাতা দেশ যুক্তরাজ্য। ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্পের সহায়তা স্থগিত রাখার বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিয়েয়ে তারা। ঢাকায় যুক্তরাজ্য হাই কমিশনের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে একথা জানিয়েছে দ্যা টেলিগ্রাফ।
হাই কমিশনের মুখ্পাত্র ওয়ারেন ডালেই বলেন, দু’টি সহায়তা কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রকল্প দুটিতে সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার (স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা) ব্যয় হওয়ার কথা।
প্রকল্প দুটি সংসদকে শক্তিশালী করা ও সংসদ সদস্যদের দক্ষতা বাড়ানো সংক্রান্ত। চলতি বছর এ দুই প্রকল্পের জন্য সোয়া এক কোটি পাউন্ড ছাড় করার কথা ছিল।
বাংলাদেশ ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে ২৭ কোটি ৪৯ লাখ পাউন্ড অর্থ সাহায্য পেয়েছে। ২০১৪-২০১৫ সালে আরও ২৬ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের অর্থ সাহায্য পাওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের খাদ্য,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনসব বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্তরাজ্য সরকার অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। মোট সহায়তার ৭০ শতাংশ আন্তর্জাতিক এজেন্সি ও বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়। বাকী ৩০ শতাংশ সরাসরি বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়ে থাকে।
দেশটি পাঁচ বছর মেয়াদে সংসদীয় সহায়তা প্রকল্পে ৫৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ-সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর মধ্যে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড চলতি ও আগামি বছর পাওয়ার কথা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় এই অর্থ বরাদ্দ পুনর্বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখার উজ জামান বলেন, ব্রিটিশ সরকারের পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্তে আমি মোটেই অবাক হচ্ছি না, এমনটা যে হতে পারে আমি আগেই জানতাম। কারণ সদ্য নির্বাচিত সংসদ সাংবিধানিক বা আইনানুগভাবে বৈধ, কিন্তু সংসদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্ন-উর্ধ্বে নয়। তাছাড়া এ সরকার রাজনৈতিক বা নৈতিক ম্যান্ডেট যেমন পায়নি, তেমনি জন সমর্থনও অর্জন করতে পারেনি।
ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগই পাননি। বাকি ১৪৭টি আসনে প্রতিকী প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে কার্যত একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করার আয়োজন করা হয়েছিলো। এমন অবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ সংসদকে যাচাই-বাছাই ছাড়া অর্থ সাহায্য করাটা সমীচীন নয়।
ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন সরকার নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানালে গত রবিবারের নির্বাচন বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরপর রবিবারের নির্বাচনে একতরফা জয়লাভ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
নির্বাচনের পর পরই এক বিবৃতিতে গভীর হতাশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বারোনিস ওয়ার্সি বলেন, অর্ধেকেরও বেশি ভোটার নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশের কোন সুযোগই পাননি।