
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই নানারকম স্ববিরোধী আচরণ ও নাটকীয়তা দেখিয়ে যাচ্ছে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টি। নির্বাচন শেষে শুরু হতে যাচ্ছে জাপা নাটকের নতুন পর্ব। মন্ত্রিসভায় থাকবে, আবার বিরোধীদলের ভূমিকাও পালন করবে- এমন ঘোষণা দিয়ে এ নাটকের সূত্রপাত করেছেন দলটির নেতারা।
অন্যদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া না নেওয়া ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ করছেন নাটুকেপনার শিরোমনি এরশাদ। বর্জন করার ঘোষণার পরও স্ত্রী রওশনের নেতৃত্বে তার দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন আইনসম্মত নয় দেখিয়ে তাকে নির্বাচনে রেখে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন এক সংবাদ সম্মেলন দাবি করেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ এরশাদ সেই নির্বাচনে জয়ের সুবাদে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন বলে দাবি করছেন দলটির মহাসচিবসহ একাধিক নেতা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে অর্থসূচককে বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা আবার একইসঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটি হচ্ছে সোনার পাথর বাটি। সংবিধান অনুসারে এমন দ্বিমুখী ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে কি-না তা আমার জানা নেই।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপিদের শপথের পর দলের তিন প্রভাবশালী নেতা সংসদ ও সরকারে তাদের ভূমিকা বিষয়ে তিন রকম বক্তব্য দিয়েছেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এরশাদের নির্দেশেই আমরা নির্বাচনে গিয়েছি এবং জাতীয় সংসদের সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে থাকবো। তবে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমাত্রা যোগ করলেন জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন আমরা মডেল বিরোধীদল হিসেবে থাকতে চাই।
আপনারা বিরোধী দলের ভুমিকায় থেকে কি করে আবার মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন এ কথা জানতে চাইলে ফিরোজ রশীদ জানান,সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টি থাকবে। কারণ এ সরকার জাতীয় ঐক্যমতের সরকার। তাই আমাদের দলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে মন্ত্রীসভাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন এবং রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা বিরোধীদলেও থাকবো।
এ ছাড়া পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এ এরশাদের শপত গ্রহণের সময় সম্পর্কেও বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন,পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আগামীকাল শুক্রবার শপথ নিতে পারেন।
আবার আরেক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন,আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে এরশাদ শপথ নিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত এদিন তিনি শপথ নেননি।
অন্যদিকে এরশাদ শপথ নেবেন কখন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার দিনক্ষণ উল্লেখ না করে বলেন তিনি(এরশাদ)খুব শিগগিরই শপথ গ্রহণ করবেন।
তিন শীর্ষ নেতার তিন ধরনের বক্তব্য বেশ ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে।
এরশাদ নির্বাচনে যাবে না এমন ঘোষণা দেওয়ার পর অসুস্থতার কথা বলে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যায় র্যাব। এর পর তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়।
বেশ কয়েকবারই এরশাদ বলেছে তার দল দশম সংসদ নির্বাচনে যাবে না। তবে এরশাদের নির্দেশনায় যে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এদিকে নিজের শপথ গ্রহণ ও সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এরশাদ বুধবার শেখ হাসিনাকে চারটি শর্ত দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি,তার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো দলের নেতাদের ব্যাংক-বিমা-করপোরেশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া,জি এম কাদেরকে উপনির্বাচনে জয়ী করা ও জাতীয় পার্টির কাউকে মন্ত্রী না করার শর্ত দিয়েছেন তিনি। এসব শর্ত পূরণ হলে তিনি যে শপথ নেবেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দাবিগুলো উপেক্ষিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান বদলে সরকারের অংশ হতে পারেন।
এরশাদ সরকারের চাপে এসব নাটক করতে বাধ্য হয়েছে না কি দলের কৌশল হিসেবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দিচ্ছে তা বুঝতে জাতীকে অপেক্ষা করতে হবে নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত।