ডেসটিনির চেয়ারম্যান এমডিসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন

  • Emad Buppy
  • January 6, 2014
  • Comments Off on ডেসটিনির চেয়ারম্যান এমডিসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন
Destiny

Destinyমাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল। এতে ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ ৩৮২ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ শীর্ষ ৫১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে কমিশনের উপ-পরিচালক ও তদন্ত দলের প্রধান মোজাহার আলী সরদার দুদক চেয়ারম্যানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা মোজাহার আলী জানান, উচ্চহারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে এমএলএম (বহুস্তরের বিপণন) ব্যবসা পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

দুদক সূত্র জানায়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএসএল) মামলায় আসামিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাড়ে আট লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। সে অর্থ থেকেই আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সরিয়ে নেন।

এ মামলায় মোট ৪৬ জনকে দায়ী করে অভিযোগপত্রের (চার্জশীট) অনুমতি চাওয়া হয়েছে। যেখানে আগত নতুন আসামি যোগ হয়েছে ২৪ জন।

অন্যদিকে, দুদকের অপর মামলাটি ছিল ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) সংক্রান্ত। ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) জন্য ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

এ অর্থ থেকে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ অর্থ বেতন-ভাতা, সম্মানী, লভ্যাংশ, বিশেষ ভাতা বা কমিশনের আকারে আত্মসাৎ বা নিজ ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল।

এতেও আসামি হিসেবে হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের মামলায় আসামি ১৪ জনের সঙ্গে নতুন ৫ জনসহ করে মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীটের অনুমতি চাওয়া হয়।

দুই মামলায় পূর্বের আসামিরা হচ্ছেন- ডেসটিনির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন, সাবেক সেনাপ্রধান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন-উর-রশিদ, পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, সাইদুর রহমান, গোফরানুল হক, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারাহ দিবা, জমসেদ আরা চৌধুরী, সাবেক পরিচালক প্রকৌশলী শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক সাধারণ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আজাদ রহমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আকবর হোসেন সুমন, সাবেক এমপি মিসেস শিরিন আক্তার, মো. রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, মো. সুমন আলী খান, মো. সাইদুল ইসলাম খান (রুবেল) ও মো. আবুল কালাম আজাদ।

এ মামলায় নতুন করে যোগ হলেন- বেস্ট এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম হায়দারুজ্জামান, প্রাক্তন হেড অব ফিন্যান্স কাজী ফজলুল করিম, উপদেষ্টা মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, প্রাক্তন সহকারি জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা আল আমীন, ইসলাম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন ম্যানেজার সিকদার কবিরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ মো. ফিরোজ আলম, প্রোপাইটার ওমর ফারুক, মো. জিয়াউল হক মোল্লা, মো.শফিউল ইসলাম, ডেসটিনি গ্রুপের কন্ট্রোলার সুনীল বরন কর্মকার, ডিভেক রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন, ডিসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্সের  চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান চয়ন, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান তপন, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমস লি. প্রধান নির্বাহী ফরিদ আকতার, ডেসটিনি গ্রুপের এডভাইজার মো. শফিকুল হক, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), ডিএমসিএসএলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি মেজর (অবঃ) সাকিবুজ্জামান খান, ডিএমসিএসএলের সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, শাহ আলম, এ কে এম সফিউল্লাহ, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, মো. আতিকুর রহমান এবং গোলাম কিবরিয়াসহ (মিল্টন) ২৯ জন।

এছাড়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের মূলধন ৫০ কোটি টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি এবং ২০টি শাখা খোলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সমবায়ের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নয়ন