
দেশে ‘’সাগর’’ নামে যে কয়টি দীঘি রয়েছে তার মধ্যে ধর্মসাগর অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী এই ধর্মসাগরটি কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী ও প্রেমিক যুগলের আগমনে সরগরম থাকে সারাক্ষণ। এছাড়াও আজকাল দর্শনার্থীদের পাশাপাশি আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। দর্শনার্থী ও অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত এখন ধর্মসাগর এলাকা। আর এর সাথেই রয়েছে ছোট সোনামণিদের বিনোদ্ন পার্ক হিসেবে খ্যাত কুমিল্লার শিশুপার্ক।
শিশুপার্কে বসে যে কেউ সাগরের পুরো দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন অনায়াসে। দীঘির পাড়ে থরে থরে সাজানো বড় বড় গাছের সারির সবুজ বনানী ধর্মসাগরকে এনে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। এছাড়া আপনি চাইলে নৌকা ভাড়া করে দিঘিতে ভেসে বেড়াতে পারেন সারাদিন। দিঘির পাড়ে রয়েছে ফুচকা আর চায়ের দোকান যেখানে সব সময় মানুষের কোলাহল লেগেই থাকে।
এতকিছুর পর আজকাল শীতের আমেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হতে শুরু করেছে ধর্মসাগরের এলাকা। প্রতিদিনই আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। সারাদিন পুরো এলাকায় মুক্ত ডানা মেলে ঝাঁক বেঁধে চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা। তবে শিকারকারীরা এ সমস্ত অতিথি পাখিগুলোকে শিকার করার চেষ্টা করছেন। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি থাকলে শিকারীদের আক্রমন থেকে রেহাই পাবে পরিযায়ী পাখিরা।
ধর্মসাগরের নামকরণঃ
প্রায় ২০০-২৫০ বছর আগে ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রজাহিতৈষী রাজা ছিলেন ধর্মপাল। তিনি ছিলেন পাল বংশের রাজা। বাংলায় তখন ছিল দুর্ভিক্ষ। রাজা দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাহায্যের জন্য এই দীঘিটি খনন করেন বলে জানা যায়। এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। আর তাই রাজা ধর্মপালের নামানুসারে এই দীঘিটির নামকরণ করা হয়েছে ধর্মসাগর।
অন্য একটি সূত্র বলছে, ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে এই দীঘিটি খনন করেন। ধর্মমাণিক্য সুদীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রীস্টাব্দ)। কুমিল্লা শহর ও তার আশপাশের অঞ্চল তার রাজত্বের অধীনে ছিল।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাস যাতায়াত করে কুমিল্লাতে। ঢাকা থেকে এশিয়া লাইন, প্রাইম, তিশা, ইত্যাদি বাসে করে আপনি অনায়াসে চলে যেতে পারেন কুমিল্লাতে। আর বাসের ভাড়াও অনেক কম জনপ্রতি মাত্র ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে আপনি কুমিল্লা যেতে পারেন আরও সহজ়ে। শহরে নেমে রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ধর্মসাগরের পাড়ে।
থাকার ব্যাবস্থাঃ
কুমিল্লাতে থাকার জন্য রয়েছে অনেকগুলো হোটেল। যেগুলোতে আপনি অনায়াসে এবং কমখরচে থাকতে পারবেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হোটেল কস্তুরী, নূরজাহান হোটেল, হোটেল আল-রফিক, আমানিয়া রেস্ট হাউস, হোটেল ড্রি্মল্যান্ড, হোটেল নূর, হোটেল মিডটাউন ইত্যাদি আরও অসংখ্য হোটেল।
এএস