টাকার কাছে নাজেহাল ডলার!

Dollar_Fallডলারের দুদর্শা কাটছেই না। টাকার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে বারবার। আগের বছরের দর পতনের পর ২০১৩ সালেও টাকার বিপরীতে কমেছে ডলারের মান। এ বছর ২০১২ সালের চেয়ে ২ টাকা কমে পাওয়া গেছে প্রতি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে  এ তথ্য জানা গেছে।

টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত দুই বছরই নিয়মিত বাজার থেকে ডলার কিনেছে। কিন্তু তারপরও দর ধরে রাখা যায়নি ডলারের। বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তেক্ষেপ না করলে টাকার বিপরীতে ডলার আরও দর হারাতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এক ডলার কিনতে প্রয়োজন হতো ৭৯ টাকা ৭৫ পয়সা। কিন্তু ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আগের চেয়ে দুই টাকা কম তথা ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সায় এক ডলার পাওয়া গেছে ।

অথচ পাশের দেশ ভারতেই ছিল উল্টো চিত্র। সে দেশে রূপির বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়েছে। দেশটিতে ডলারের বিপরীতে রূপির মান কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আমদানি ব্যয় হ্রাস,রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বেশি আসায় বাজারে চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বেশি হয়ে গেছে।এ কারণে স্থানীয় বাজারে ডলারের দর নিম্নমুখী। এ অবস্থায় দেশের রপ্তানি খাতকে চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার থেকে ডলার কিনছে বলে জানা গেছে।

তাছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগে উৎসাহি হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন বেড়েই চলছে। ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্স (প্রবাসি আয়)-এর কোন ব্যবহার না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর অলস ডলার পড়ে আছে। এ কারণে বাজারে ডলারের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডলারের দাম কমে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তাই ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা।

২০১৩ সালের আগস্টে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রূপির ব্যাপক দরপতন ঘটে। এ সময় ডলারের বিপরীতে রূপির বিনিময় হার ছিলো ৬৪ দশমিক ১৩ রূপি। রুপির দরপতনের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কারণ তিনটি হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ভারত থেকে উঠিয়ে নিচ্ছেন, সার্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের মান বাড়ছে। রুপির মানের পতনের ফলে বিশ্বের,বিশেষ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বড় বড় শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নামে।

জানা গেছে,ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২২৮ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ২৬ কোটি, নভেম্বরে ৩৭ কোটি, অক্টোবর মাসে ৫৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৩২ কোটি ৯ লাখ ডলার, আগস্টে ২২ কোটি ৬ লাখ ডলার এবং জুলাই মাসে ৫১ কোটি ২ লাখ ডলার কেনে। আর ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সব চেয়ে বেশি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক।এর পরিমাণ ছিল ৪৫৩ কোটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন,সম্প্রতি আশপাশের কয়েকটি দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পদক্ষেপের কারণে কয়েক মাস থেকে ডলারের দাম ৭৭.৭৫ টাকা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে। নগদ অর্থের পরিবর্তে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন,বাজারে ডলারের সরবরাহ এখন ভালো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এ মুহূর্তে বাজার থেকে ডলার না কিনত,তাহলে ডলারের দর ৭০/৭১ টাকায় নেমে আসতো।