
‘বাড়ি যাওয়া হয় না অনেক দিন। মা বারবার ফোন করে বলেছে আজ কালের মধ্যেই বাড়ি যেতে। বাবার শরীরটা নাকি তেমন ভালো নেই। তিনিও বলেছেন আমাকে যেতে। জানিনা আমি আমার বাবাকে দেখতে পারবো কিনা?’
চট্রগ্রামের সাদ্দাম হোসেন এভাবেই জানাচ্ছিলেন তার বাড়ি যেতে না পারার আক্ষেপ।
আমির মাহমুদ ব্যবসা করেন। ব্যবসার কারণে মাঝে মাঝেই তাকে যেতে হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আজ রাতের মধ্যেই চট্টগ্রামে যাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। সড়ক পথে কোনো গাড়ি নেই। নিজের গাড়ি নিয়েও অত দূরের পথে যেতে সাহস হয় না। তাই রেলই তার ভরশা। কিন্তু তিনি বসে আছেন রেলের অপেক্ষায়।
খাগড়াছড়ির মোহাম্মাদ মনির হোসেন ৬ বছরের মেয়ে জেসমিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কমলাপুর রেল স্টেশনে। মেয়ের হাতটি ধরে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন কাউন্টারের দিকে। তাকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, জরুরী কাজে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। তবে তিনি জানতেই পারছেন না চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে কোনও ট্রেন আজ ছেড়ে যাবে কি না।
সিলেটের দেওয়ান আ-কুদ্দছ খান ব্যক্তিগত কাজে ঢাকাতে এসেছিলেন কয়েক দিন আগে। আজ ৩ দিন ধরে রেল স্টেশনে আসছেন তবে সিলেটে যাওয়ার কোনও উপায় পাচ্ছেন না তিনি। কবে নাগাদ ট্রেন ছাড়তে পারে এটাও জানতে পারছেন না তিনি।
আওয়াল হোসেন কাজ করেন ঢাকার একটা প্রাইভেট ফার্মে। অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে জামালপুর যাচ্ছিলেন তিনি। তবে ৩ দিনই স্টেশনে এসে আবার বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে।
মাহমুদ,সাদ্দাম আর মনিরের মতো আজও ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন অসংখ্য যাত্রী। তবে কখন ট্রেন আসবে তা বলতে পারেন না কেউই। ট্রেন আসবে কিনা স্টেশন কর্তৃপক্ষও এমন খবর জানাতে পারেননি।
এদিকে ট্রেন না পেয়ে অসহনীয় দূর্ভোগে পরা যাত্রীরা কেবল ট্রেন না পাওয়াই নয়, রাজধানীতে গণপরিবহন না থাকায় তাদের অনেকে বাসায় ফেরা নিয়েও বিপাকে পরেছেন।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বাসারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ট্রেনের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
তবে অনুসন্ধান কেন্দ্রের মাসুদুর রহমান অর্থসূচককে জানান, ট্রেন ছাড়ার কোনও তথ্য আপাতত তার কাছে নাই। তবে ঢাকাতে যদি কোনও গাড়ি পৌঁছে সে ক্ষেত্রে হয়ত গাড়ি ছাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ রুখে দিতে আওয়ামী লীগ সারা দেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে চালক লীগ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।